সেনা প্রত্যাহার না করে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে ইসরাইল: হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৮ এএম

হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ এনে বলেছে, দক্ষিণ গাজার মিসর সীমান্ত বরাবর মোতায়েনকৃত সেনা প্রত্যাহার করা উচিত ছিল, যা এখনো করা হয়নি।
গাজা-মিসর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোর, যা সালাহউদ্দিন করিডোর নামেও পরিচিত, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে।
সোমবার (১০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল আরাবিয়াহ।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ইসরাইল ফিলাডেলফি করিডোর থেকে সেনা সংখ্যা পর্যায়ক্রমে কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পালন করেনি।’
হামাসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘চুক্তির ৪২তম দিনে ইসরাইলের সেনা প্রত্যাহার শুরু করার কথা থাকলেও তা হয়নি এবং চুক্তির ৫০তম দিন (রোববার) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার শর্তও মানা হয়নি।’
ইসরাইলের এই অবস্থানকে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটিকে ব্যর্থ করার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে হামাস।
উল্লেখ্য, গত বছর ইসরাইলি বাহিনী গাজার দক্ষিণ সীমান্তে ফিলাডেলফি করিডোরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
এদিকে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে ফিলাডেলফি করিডোরের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা অগ্রাহ্য করা যাবে না।’
হামাস কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতির শর্ত মানতে বাধ্য করে।
হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা চাই মধ্যস্থতাকারীরা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত হস্তক্ষেপ করুক, যেন দখলদার বাহিনী প্রত্যাহার করা হয় এবং দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা বিলম্ব ছাড়া শুরু হয়।
সোমবার, ইসরাইলের একটি প্রতিনিধিদল দোহায় পৌঁছেছে যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ ১ মার্চ শেষ হয়েছে, তবে এর পরবর্তী ধাপ নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। হামাস দ্রুত দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা চাইলেও ইসরাইল প্রথম ধাপ দীর্ঘায়িত করতে চায়।
জাতিসংঘের সতর্কতা: বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করায় গাজায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা
ইসরাইল গাজার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় জাতিসংঘ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, এর ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় বেসামরিক জনগণের জন্য ‘ভয়াবহ পরিণতি’ নেমে আসবে।
ইসরাইল ইতোমধ্যেই গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করেছে এবং এখন সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহও কেটে দিয়েছে। এতে পানি বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্রের একমাত্র বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র সাইফ মাগাঙ্গো এক ই-মেইলে এএফপিকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের ফলে গাজার পানি বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র, হাসপাতাল ও বেকারিগুলো বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। যা বেসামরিক জনগণের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গাজার জনগণের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
মাগাঙ্গো যোগ করেন, ‘সামরিক চাপ সৃষ্টি করতে বেসামরিক জনগণের জন্য মৌলিক চাহিদা বন্ধ করা হলে তা আন্তর্জাতিক আইনে সামষ্টিক শাস্তির আওতায় পড়তে পারে। ’
এদিকে, সোমবার ইসরাইলি প্রতিনিধিদল কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছেছে, যেখানে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে।