সাত দিন ধরে গাজা উপত্যকায় কিছুই প্রবেশ করছে না

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম
-67cc5ae2982bc.jpg)
এবার বুলেটে নয়, চিকিৎসার অভাবে মরবে গাজার শিশুরা। কারণ চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি নেই উপত্যকাটিতে। খাবার প্রবেশেও বর্বর ইসরাইলি সেনাদের বাধা।
গত সাত দিন ধরে কোনো ধরনের ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়নি তারা। গাজায় দ্রুত চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি না দিলে শিশুরা মারা যাবে বলে সতর্ক করেছেন ইউনিসেফের শিশু সংস্থার যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ রোজালিয়া বোলেন। শনিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
সাত দিন ধরে গাজা উপত্যকায় কিছুই প্রবেশ করছে না। কোনও সাহায্য নেই, খাবার নেই, ওষুধ নেই। অন্যদিকে, উপত্যকাটিতে যেটুকু আছে তা-ও বিক্রে হচ্ছে চড়া মূল্যে। কেনার সামর্থ নেই কারো। এমনকি রমজানে রোজা ভাঙার জন্য খাবারও কিনতে পারছেন না ফিলিস্তিনিরা। মানবিক পরিস্থিতি ভেঙে পড়ছে গাজা।
স্থলপথ পুনরায় খোলার কোনও খবরের জন্য মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করছেন ফিলিস্তিনিরা। বোলেন বলেছেন, ইসরাইল শুধু খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীই বন্ধ করে নি, সঙ্গে জ্বালানি সরবরাহেও বাধা দিচ্ছে। গাজায় এখন পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ নেই। যেখানে হাসপাতালগুলো পুরোপুরি এর উপর নির্ভরশীল। ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফলে বাড়ছে শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি।
তিনি আরও বলেছেন, ‘কিছু দিন আগে, হাসপাতালে ভেন্টিলেটর এবং সিপিএপি মেশিনের অভাবে জšে§র তিন সপ্তাহ পরে একটি নবজাতক শিশু মারা গেছে। আমি নিজের চোখে এটি দেখেছি।’ এমন পরিস্থিতিতে গাজার শিশুদের জরুরি সাহায্যের প্রয়োজন বলেই জানিয়েছেন বোলেন। চরম খাদ্য সংকটের মধ্যেই আবার তীব্র ঠান্ডার সঙ্গেও লড়াই করছে গাজার শিশুরা। আশ্রয় নেই তাদের। নেই পায়ে পড়ার মতো একজোড়া জুতা। গাজা শহরের একটি জীর্ণ তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নারী ফাতমা ইব্রাহিম বলেছেন, তিনি এবং তার সন্তানরা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাস করছেন।
তিনি আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘ঠান্ডা বাতাস বইছে, বৃষ্টি হচ্ছে, সন্তানদের পায়ে জুতা নেই। আমরা অনেক কষ্ট পাচ্ছি।’ এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রীর সরবরাহ স্বাভাবিক করতে ইসরাইলকে চার দিন সময় দিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। এই সময়ের মধ্যে ত্রাণ প্রবেশে স্বাভাবিক না করলে লোহিত ও ভূমধ্যসাগরে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজে নৌযানে হামলা শুরুর হুমকি দিয়েছে গোষ্ঠীটি।
গাজায় শিশুদের সঙ্গে ইসরাইলের বর্বরতার শিকার হয়েছেন নারীরাও। নারী দিবসের দিনে উপত্যকাটির সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান সালামা মারুফ বলেছেন, গাজায় ইসরাইলের হামলায় ১২ হাজার ৩১৬ জন নারী নিহত হয়েছেন। সরকারি তথ্য অনুসারে, ইসরাইলি আগ্রাসনে অঙ্গচ্ছেদের কারণে ২ হাজার নারী ও মেয়ে স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধী এবং ১৬২ জন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও, ১৩ হাজার ৯০১ জন নারী বিধবা হয়েছেন এবং কমপক্ষে ১৭ হাজার মা তাদের সন্তান হারিয়েছেন। ইসরাইলের এ গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম দেশগুলো।
আরব লীগের গাজা প্রস্তাবে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের সাড়া
এদিকে আরবের গাজা পুনর্গঠন প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্য।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলোর মন্ত্রীরা বলেছেন, মিশরের নেতৃত্বাধীন আরব পরিকল্পনাটি গাজার পুনর্গঠনের একটি বাস্তবসম্মত পথ দেখায়। এটি বাস্তবায়িত হলে গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের বিপর্যয়কর জীবনযাত্রার দ্রুত অবসান ঘটবে বলেও জানিয়েছেন তারা। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল উভয়ই আরব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব হুসেইন ইব্রাহিম তাহা ফিলিস্তিনি জনগণের তাদের ভূমিতে থাকার অধিকারের উপর জোর দেন।