ইউক্রেনে সেনা সহায়তা বন্ধের চিন্তা ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১০:৩০ পিএম

ইউক্রেনের পরম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। দুই মাস আগেও এমনটাই জানতো বিশ্ব। কিন্তু জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন মসনদে বসার পরপরই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। জটিল হতে শুরু করে মার্কিন-ইউক্রেন সম্পর্ক। এরই মধ্যে শুক্রবার ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যার জেরে আরও ঘনীভূত হতে থাকে সংকট। দ্বন্দ্বের জেরে এবার ইউক্রেনের যুদ্ধ রসদে লাগাম টানছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনে সেনা সহায়তা বন্ধের চিন্তা করেছেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে মঙ্গলবার গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনাও করবেন তিনি। দ্য টেলিগ্রাফ।
সোমবার নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, পিট হেগসেথ-সহ সিনিয়র উপদেষ্টাদের সঙ্গে দেখা করবেন ট্রাম্প। যেখানে ইউক্রেনে বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত এবং আর্থিক সহায়তা বাতিল করাসহ বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করা হবে।
শুক্রবারের ঘটনার জের ধরেই এ বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প। এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক খুব দ্রুতই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সৌদি আরবে তাদের বৈঠক হতে পারে। এদিকে কয়েকদিনের তুমুল উত্তেজনার মধ্যে এবার ইউক্রেনে এক মাসের আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। এ যুদ্ধবিরতির আওতায় স্থলযুদ্ধ পড়বে না। আকাশ, সমুদ্র ও জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলার ক্ষেত্রে এ যুদ্ধবিরতি প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রোববার ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর এ কথা জানান তিনি।
রোববার ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আহ্বানে লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের একটি সম্মেলন হয়। সেখানে যোগ দেন ম্যাক্রোঁ। সে সময়ই ফ্রান্স ও ব্রিটেনের একমাসের আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের কথা জানান তিনি। শুক্রবার হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তিক্ত বৈঠকের দুই দিন পর এ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এবং দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চত করার লক্ষ্যে চার দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করা, স্থায়ী শান্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যে কোনো শান্তি আলোচনার টেবিলে ইউক্রেনকে শামিল রাখার কথা জানিয়েছেন স্টারমার। সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভের প্রতি তাদের সমর্থন সুসংহত করেন। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য আরও ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন এবং ইউক্রেনে যে কোনো যুদ্ধবিরতি রক্ষায় একটি জোট গঠনের উদ্যোগ নেন।
স্টারমার বলেছেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ ইউক্রেনের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ বন্ধের একটি পরিকল্পনা তৈরি করবে, যা পরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পেশ করা হবে।
এদিকে ইউক্রেনের নিরাপত্তায় কানাডা সম্ভাব্য সব বিকল্প বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ইউক্রেনের নিরাপত্তায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ‘কোয়ালিশন অব উইলিং’ ঘোষণার পর কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্য এলো। ইউক্রেন সংঘাতের শুরু থেকেই কানাডা দেশটির পাশে রয়েছে জানিয়েছেন ট্রুডো। এদিকে ইউক্রেনে সেনা পাঠানো নিয়ে ট্রুডোর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা ট্রুডোর মন্তব্যে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, নিজেদের সীমান্ত রক্ষার জন্য কানাডার পর্যাপ্ত সেনা আছে কি না। সম্প্রতি একাধিক বক্তব্যে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার প্রস্তাব দেন ট্রাম্প। মূলত ট্রাম্পের সেই প্রস্তাবকে ইঙ্গিত করেই রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ কথা বলেন।