যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ চুক্তি আসন্ন, কিন্তু নিরাপত্তার বিষয় অমীমাংসিত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪২ এএম

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার বলেন, তিনি এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভের লাভজনক ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজের ওপর বস্তুত অধিকার পাবে যা কিনা রাশিয়ার তিন বছরব্যাপী আগ্রাসী যুদ্ধে ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে যে অস্ত্র পাঠিয়েছিলে তার মূল্য পুষিয়ে নেবে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার এই নতুন মেয়াদের প্রথম মন্ত্রীসভার বৈঠকে বলেন যে এই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার হোয়াইট হাউসে আসবেন।
ট্রাম্প বলেন, এই চুক্তি আমাদের জন্য বিশাল সম্পদ নিয়ে আসছে, তবে তিনি বলেন তার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে এই যুদ্ধ বন্ধ করা যার ফলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের লক্ষ লক্ষ সৈন্য এবং ইউক্রেনের অসামরিক লোকজনও হতাহত হয়েছেন।
ওয়াশিংটন কিয়েভকে তার যোদ্ধাদের সহায়তার জন্য যে ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের অস্ত্র শস্ত্র দিয়েছে সে প্রসঙ্গে বলেন, আমার দুই নম্বর বিষয়টি হচ্ছে সেই অর্থ ফিরে পাওয়া। আমাদের সাজসরঞ্জাম ছাড়া, রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নিলে যুদ্ধ এমনিতেই দ্রুত শেষ হয়ে যেত।
এখন যেমনটি, রাশিয়া ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত অঞ্চলের এক-পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করছেএবং আগামীতে শান্তি চুক্তিতে তারা দখল করা এই অঞ্চল ফেরত না দেওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেছে।
ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করছেন এই লড়াই বন্ধ করার জন্য শেষ পর্যন্ত তিনি জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবেন। এই সংঘাত বন্ধ করার লক্ষ্যে ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন কিন্তু গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে প্রথম বৈঠক থেকে ইউক্রেন ও ইউরোপের কর্মকর্তাদের বাদ দেওয়া হয়।
ট্রাম্প ঘোষণা করেন, আমি নির্বাচিত হয়েছি বলেই, এই যুদ্ধ শেষ হতে চলেছে। তিনি বলেন, পুতিনের এটি নিস্পত্তি করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। আমরা চুক্তি করতে যাচ্ছি।
তবে তিনি বলেন, শান্তি চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেনকে পশ্চিমের প্রধান সামরিক জোট নেটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি ভুলে যেতে হবে।
কিয়েভে জেলেনস্কি এক সংবাদ সম্মেলেন বলেন, ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু কিয়েভ সরকার যেটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে, ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেই নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টির এখনো মীমাংসা হয়নি।
ইউক্রেনের জন্য অব্যাহত ভাবে সামরিক সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে ট্রাম্প অনেক দিন থেকেই তার সংশয় প্রকাশ করে আসছেন। গত বছর তিনি এ কথা বলতে অস্বীকার করেছিলেন যে তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধে জয় দেখতে চান।
ট্রাম্প পুতিনকে আক্রমণ চালানোর জন্য অভিযুক্ত না করে জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক বলে অভিহিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নেতা বলেন, তিনি বিশেষত বিরক্ত এই কারণে যে তার পূর্বসূরি, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হন কিন্তু ইউক্রেন এই খরচটি পরিশোধ করবে তেমন কোনো সুযোগ রাখেন নাই। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিজেদের সেনাদের না পাঠিয়ে বাইডেন সামরিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে পশ্চিমা মিত্রদের জোটের নেতৃত্ব দেন।
জেলেনস্কি বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা অনুদান ছিল, ঋণ নয় যা পরিশোধ করতে হয়। তবে এখন তারা প্রযুক্তিগত উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজ চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
জেলনস্কি বলেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ ব্যাপক আলোচনার আশা করছেন। আমি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করতে চাই।
চুক্তির বিষয়গুলো
এর আগে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শিমিহাল সে দেশের পাবলিক টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন যে ওই চুক্তিতে ইউক্রেনের পুনর্নির্মাণে জন্য বিনিয়োগের শর্তগুলো রয়েছে।
ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী যুদ্ধ শেষ হলে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ, তেল ও গ্যাস থেকে অর্জিত অর্থের ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ করা হবে একটি স্থিতিশীল ও অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ ইউক্রেন বিনির্মাণে এবং অবশিষ্ট অর্ধেকটা যাবে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত তহবিলে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, অর্থনৈতিক চুক্তিতে একটি লাইন আছে যে যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেতে ইউক্রেনের প্রচেষ্টাকে সমর্থ করে” তবে সেটা বলতে কি বোঝানো হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমার বুধবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রনের সঙ্গে রাশিয়ার অস্ত্রবিরতি যদি কার্যকর হয় তা হলে সেটি প্রয়োগে ৩০ হাজার শান্তি রক্ষী বাহিনী রাখার ব্যাপারে ইউরোপীয় উদ্যোগের বিস্তারিত জানাবেন। তবে এখনো কোনো শান্তি আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয় নাই।
ইউরোপীয় নেতারা বলেছেন, শান্তি রক্ষী বাহিনীর পেছনে আমেরিকার সামরিক সহযোগিতা থাকতে হবে যেমন আমেরিকান স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নজরদারি, বিমান প্রতিরক্ষা কিংবা বিমান বাহিনীর সহযোগিতা। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে এ রকম কোন পরিকল্পনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেননি তবে বুধবার শান্তিরক্ষী বাহিনীকে একটি ভাল জিনিষ বলে উল্লেখ করেছেন।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা