ভারতে ৭২ ঘণ্টা ধরে সুড়ঙ্গে আটকা ৮ শ্রমিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৬ পিএম

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার নাগারকুর্নুল জেলায় ধসে পড়া একটি সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৮ শ্রমিককে উদ্ধার প্রচেষ্টা চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলে কাদামাটির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় খনন কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
সোমবার সুড়ঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করা বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে, সেখানে কাদার স্তর আরও এক মিটার বেড়েছে এবং সুড়ঙ্গের খাঁড়ির দিকে আরও কাদা প্রবাহিত হচ্ছে। প্রচুর কাদা জমে থাকায় কেন্দ্রস্থলে পৌঁছনোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যেতে বিকল্প কৌশল হিসেবে পাশ দিয়ে নতুন পথ বের করে প্রবেশের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারি যন্ত্র দিয়ে খননের ফলে সুড়ঙ্গের কাঠামোগত স্থায়িত্ব ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এতে আটকে পড়া শ্রমিকদের পাশাপাশি উদ্ধারকর্মীদের জীবনও বিপদের মুখে পড়তে পারে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে অভিযান চালানো হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ ক্রিস কুপার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত, তাই ভারি যন্ত্র দিয়ে খনন করলে আরও বিপদ হতে পারে।
সুড়ঙ্গে প্রতি মিনিটে ৩,২০০ লিটার পানি ঢুকছে। ফলে বালি, পাথর ও ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে মিশে আরও কাদায় পরিণত হচ্ছে। তবে সুড়ঙ্গ থেকে পানি বের করার কাজ চলছে।
এর আগে, শনিবার তেলেঙ্গানার নাগারকুর্নুল জেলায় সেচ প্রকল্পের জন্য সুড়ঙ্গ খনন করতে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন শ্রমিকরা। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময় তারা পৌঁছে যান ১৪ কিলোমিটার গভীরে, আর তখনই আকস্মিকভাবে ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের ছাদ!
এরপর থেকে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে এখনো কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের মধ্যে দুজন প্রকৌশলী, দুজন অপারেটর ও চারজন শ্রমিক রয়েছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
আটকে পড়াদের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের ৪ জন, উত্তরপ্রদেশের ২ জন, জম্মু ও কাশ্মীরের ১ জন এবং পাঞ্জাবের ১ জন রয়েছেন। তেলেঙ্গানার মন্ত্রী জুপালি কৃষ্ণ রাও জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গে আটকে পড়াদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
তিনি বলেন, সুড়ঙ্গের ভেতরে এত বেশি কাদামাটি জমেছে যে হাঁটাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকর্মীরা রাবারের টিউব ও কাঠের তক্তা ব্যবহার করে এগোনোর চেষ্টা করছেন। তবে আমরা এখনো আশা ছাড়িনি এবং সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে উত্তরাখণ্ডের সিলকিয়ারা বেন্ড-বারকোট সুড়ঙ্গে আটকে পড়া নির্মাণশ্রমিকদের উদ্ধারে সহায়তা করা ‘র্যাট মাইনার’দের একটি দল উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে।
বর্তমানে নয়টি জাতীয় সংস্থা উদ্ধারকাজে নিযুক্ত রয়েছে, এবং তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি প্রতি মূহুর্তে পুরো ঘটনাটি তদারকি করছেন।
এ ছাড়া, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই) ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এনজিআরআই)-এর বিশেষজ্ঞদেরও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে।