হামাসের বিরুদ্ধে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করতে নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, দেশটি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পুনরায় শুরুর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি অভিযোগ করেছে, বন্দি মুক্তির প্রক্রিয়া স্থগিত করার মাধ্যমে ইসরাইল গাজার পাঁচ সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ মার্চের শুরুতে শেষ হওয়ার কথা, তবে পরবর্তী ধাপের বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা বিধ্বংসী যুদ্ধ কার্যত বন্ধ করে দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় মার্চের শুরুতে শেষ হওয়ার কথা, তবে পরবর্তী ধাপের বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। রোববার, উত্তেজনা নতুন করে বাড়ানোর পাশাপাশি, ইসরাইল পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে গাজার যুদ্ধ শুরুর পর সহিংসতা বেড়েছে।
ইসরাইল শনিবার গাজার বন্দি বিনিময়ের প্রথম পর্যায়ের আওতায় ৬০০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি স্থগিত করেছে। নেতানিয়াহু রোববার এক সামরিক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা যে কোনো মুহূর্তে আবার তীব্র লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত,’ এবং এই যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, আলোচনার মাধ্যমে অথবা অন্য উপায়ে ইসরাইল তাদের লক্ষ্য অর্জন করবে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা হামাসের অধিকাংশ সংগঠিত বাহিনীকে নির্মূল করেছি, তবে কোনো সন্দেহ নেই— আমরা পুরোপুরি আমাদের যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করব, আলোচনা বা অন্য কোনো উপায়ে।’
ইসরাইলের যুদ্ধের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে হামাসকে পরাজিত করা এবং ২০২৩ সালের হামলায় অপহৃত সব বন্দিকে ফিরিয়ে আনা। বর্তমানে ৬২ জন ইসরাইলি এখনও গাজায় বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৫ জন মারা গেছে বলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর দাবি।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ এই সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে আসছেন যুদ্ধবিরতির ‘প্রথম ধাপের সময়সীমা বাড়ানোর’ লক্ষ্যে। ট্রাম্প সম্প্রতি গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
গাজার যুদ্ধের পাশাপাশি ইসরাইল পশ্চিম তীরেও সামরিক অভিযান তীব্র করেছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ২০ বছর পর প্রথমবারের মতো তারা উত্তর পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে একটি ট্যাংক ইউনিট মোতায়েন করতে যাচ্ছে। তারা এটিকে অভিযান সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা গাজায় যুদ্ধবিরতির পরপরই শুরু করা হয়।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরাইলের এই সামরিক অভিযানের কারণে জেনিনসহ বিভিন্ন শরণার্থী শিবির থেকে ৪০,০০০ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন, ‘সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পরবর্তী এক বছরের জন্য তারা দখলকৃত শিবিরগুলোতে অবস্থান করবে এবং বাসিন্দাদের ফিরে আসা ও সন্ত্রাসবাদ পুনরায় মাথাচাড়া দেওয়া প্রতিরোধ করবে’।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির সময়টিতে পশ্চিম তীরে এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত সংবেদনশীল, এবং নেতানিয়াহু অভ্যন্তরীণ চাপে রয়েছেন— হয় যুদ্ধ আবার শুরু করতে হবে, নাহলে তার কট্টরপন্থি জোট সরকার ভেঙে পড়তে পারে।