‘আমরাই আমাদের পর্যটনশিল্প গড়ে তুলব’, ট্রাম্পকে গাজাবাসীর কড়া বার্তা
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম
![‘আমরাই আমাদের পর্যটনশিল্প গড়ে তুলব’, ট্রাম্পকে গাজাবাসীর কড়া বার্তা](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/07/The-Grand-Palace-hotel-stands-damaged-67a62b884f054.jpg)
যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছে, তারা নিজেরাই নিজেদের উপকূলীয় পর্যটনশিল্প তথা হোটেল ও রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলতে পারবে এবং গাজা পুনর্নির্মাণ করতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
একই সঙ্গে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে তিনি গাজাকে জনশূন্য করে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা বা বিলাশবহুল নগরী’ বানানোর কথা বলেছেন।
দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চালানো ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার ভবনগুলো এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের অবরোধের মধ্যেও গাজাবাসী একটা সময় নিজস্ব স্থানীয় পর্যটন শিল্প গড়ে তুলেছিল।
এ নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে আসাদ আবু হাসেইরা নামে গাজার এক বাসিন্দা বলেন, ‘কোনো কিছুই পুনর্নির্মাণ করা অসম্ভব নয়’। সেই সঙ্গে পুনর্নির্মাণের আগেই তিনি তার রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার পরিবেশন শুরু করবেন বলেও ঘোষণা দেন।
গাজার এই বাসিন্দা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ট্রাম্প বলছেন, তিনি গাজার রেস্টুরেন্ট বদলাতে চান, গাজাকে বদলাতে চান এবং গাজার জন্য নতুন ইতিহাস তৈরি করতে চান। কিন্তু আমরা আরবই থেকে যাব এবং আরবদের ইতিহাস কখনোই বিদেশিদের ইতিহাস দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে না’।
গাজার প্রতিরোধ ও প্রতিজ্ঞা
একই সঙ্গে, তার রেস্টুরেন্টটি ‘আগের চেয়েও ভালো অবস্থায়’ ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রেস্টুরেন্ট মালিক মোহাম্মদ আবু হাসেইরা।
এ সময় তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি এখানে বিলাশবহুল হোটেল-রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করতে চান। কিন্তু রেস্টুরেন্ট তো এখানে ছিলই, হোটেলও ছিল! তাহলে এগুলো ধ্বংস করার দরকার কী ছিল? আর এখন নতুন করে তৈরি করার দরকার হচ্ছে কেন?
গোটা গাজা উপত্যকা একটা সময় ইসরাইলি পর্যটকদের জন্য ছিল এক জনপ্রিয় গন্তব্য, পর্যটনের জায়গা। ২০০৭ সালে হামাস গাজার শাসনভার গ্রহণের পরও উপত্যকাজুড়ে রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফেগুলো ছিল বেশ জমজমাট।
কিন্তু দখলদার ইসরাইলের যেন তা সহ্য হলো না। অত্যাচার-নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন বাড়িয়ে দিল। যার প্রতিবাদ হিসেবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিরুদ্ধে এক ঝটিকা অভিযান চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
এরপর থেকেই গত ১৫ মাস ধরে চালানাও লাগাতার হামলায় ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করাসহ গোটা গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করল বর্বর ইসরাইল। আর এখন তাদের ইন্ধনদাতা
আমেরিকা চাচ্ছে জীবিত ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে গাজা উপত্যকা দখলে নিতে এবং নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে।
বিশ্বজুড়ে নিন্দা, গাজাবাসীর প্রত্যাখ্যান
জানা গেছে, গাজাকে ফিলিস্তিনিদের থেকে মুক্ত করে ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা মূলত তার জামাতা জ্যারেড কুশনারের পুরোনো প্রস্তাবেরই পুনরাবৃত্তি।
সেইসঙ্গে পরিকল্পনাটি বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে পড়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি ‘জাতিগত নির্মূলের’ শামিল এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।
গাজাবাসীও এই পরিকল্পনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা প্রতিজ্ঞা করে বলেছে, নিজেদের ধ্বংস হওয়া ঘরবাড়ি ছেড়ে তারা কখনোই অন্য কোথাও যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের জন্য ১৯৪৮ সালের সেই ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়ের স্মৃতিকেই ফিরিয়ে আনে। ওই সময়ে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের পর ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল। সূত্র: রয়টার্স