যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করা ১০৪ জন ভারতীয় বিশেষ বিমানে নিজ দেশে ফিরেছেন। তাদেরকে হাত ও পা বাঁধা অবস্থায় ফেরত পাঠানো হয়। তাদের বহনকারী মার্কিন সামরিক বিমানটি বুধবার পাঞ্জাবের অমৃতসরে পৌঁছায়। যা ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযানের অংশ।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেরত আসা এই ভারতীয়রা তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে ‘এজেন্ট’দের বিশাল অংকের অর্থ দিয়েছিলেন। যার বিনিময়ে তারা তাদেরকে গোপনে মার্কিন মুলুকে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে সেই এজেন্টরা তাদের অনেককেই মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।

এদিকে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত নতুন এক ভিডিওতে দেখা যায়, পানামার গভীর জঙ্গলে শরণার্থী শিবির গড়ে তুলেছে ভারতীয়রা। যেখানে নারীরা শিশুদের কোলে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এবং পুরুষরা কাদামাটির মধ্যে বসে আছেন।

তাদের পথচলা ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। তারা পানামা থেকে কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালা হয়ে মেক্সিকোতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে মার্কিন সীমান্ত পেরিয়ে সে দেশে ঢোকার চেষ্টা করেন তারা।

ফিরে আসা ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য

ভারতে ফিরে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন জসপাল সিং। পাঞ্জাবের গুরদাসপুরের এই বাসিন্দা বলেন, 

‘এজেন্ট আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, আমাকে বৈধভাবে পাঠানো হবে। কিন্তু সে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে।  

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি ৩০ লাখ টাকা দিয়েছি, কিন্তু অবশেষে ধরা পড়ে ফেরত আসতে হলো’।

হরবিন্দর সিং নামের আরেক অভিবাসী বলেন, ‘আমাকে কাতার, ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়া, পানামা, নিকারাগুয়া হয়ে মেক্সিকোতে নেওয়া হয়। সেখান থেকেই আমি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তা পারিনি’।

তার ভাষায়, ‘আমরা পাহাড় পার হয়েছি। একবার তো আমাদের নৌকাটি ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পানামার জঙ্গলে আমাদের একজন মারা গেছেন, সমুদ্রে ডুবে গেছেন আরেকজন’।

হরবিন্দর জানান, তার মোট ৪২ লাখ টাকা খোয়া গেছে। অথচ এমন বিপজ্জনক যাত্রার পরও তিনি এখন শূন্য হাতে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

মার্কিন প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা

এই ১০৪ জন ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠানো ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসনবিরোধী কঠোর নীতিরই অংশ। আসন্ন মোদি-ট্রাম্প বৈঠকের ঠিক আগ দিয়েই এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

এদিকে ভারতে ফিরে আসা অভিবাসীদের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তারা কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত কি না, তাও যাচাই করা হচ্ছে।