সন্ত্রাসীরাই সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ করছে: পেজেশকিয়ান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৮ পিএম
ইরানের বিরুদ্ধে একাধিক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানো সেই একই গোষ্ঠী এখন ইরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাবাদে সমর্থন দেওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে বলে জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। পাশাপাশি তিনি ইরানে বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের তীব্র নিন্দাও জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পেজেশকিয়ান এসব কথা বলেন।
ইরানের শান্তি, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ ও বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের বিষয়ে ইরানের অবস্থান এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে দেশটির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ইসলামি বিপ্লবের সময় শৈশবের স্মৃতিচারণা করে পেজেশকিয়ান বলেন, আমাদের লড়াই ছিল বৈষম্য এবং অবিচারের বিরুদ্ধে। প্রথম থেকেই ইরান ছিল চক্রান্ত এবং সন্ত্রাসী আক্রমণের লক্ষ্য, যেখানে দেশের স্বাধীনতার বিরোধী গোষ্ঠীগুলো অনেক রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে হত্যা করেছিল।
তিনি বলেন, যারা আমাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছিল, তারা এখন আমাদের সন্ত্রাসবাদের সমর্থক বলে অভিযোগ করছে। আমরা কখনো আক্রমণকারী ছিলাম না এবং কখনো যুদ্ধ বা অশান্তি খুঁজে বের করতে চাইনি।
পেজেশকিয়ান তেহরানে ইসমাইল হানিয়ার হত্যার কথা উল্লেখ করে বিশ্বব্যাপী মিডিয়ার মাধ্যমে ইরানকে অস্থিতিশীলতার উৎস হিসাবে ভুলভাবে চিত্রিত করার জন্য নিন্দা করেন। তবে একই সময়ে এসব মিডিয়া গাজায় ১৪,০০০ এরও বেশি নিরপরাধ শিশুকে হত্যার খবর উপেক্ষা করেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট গাজায় হাসপাতাল বোমা বিস্ফোরণ এবং নারী ও শিশুদের হত্যাসহ ইসরাইলি যুদ্ধপরাধের বিষয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলোর নীরবতা নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি পশ্চিমা নেতাদের কাছে প্রশ্ন রাখেন- কোনো ধরনের মানবাধিকার শিশুদের হত্যা সমর্থন করে কিনা।
অনুষ্ঠানে পেজেশকিয়ান ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়ে ওঠা সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, এমনকি যারা আমাদের দোষারোপ করে, তারা জানে যে আমাদের মতাদর্শ জনসাধারণের হত্যাকাণ্ডের অনুমতি দেয় না। ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড যেকোনো সময় যাচাই করা যেতে পারে।
ইসরাইলের আগ্রাসনের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসরাইল তাদের প্রতিবেশী প্রতিটি দেশে আক্রমণ করেছে। অথচ তারা মানবাধিকার রক্ষার দাবি করে। তাহলে কে ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে? কোন মানবাধিকার মানুষের বাড়ি থেকে তাদের উৎখাত করাকে সমর্থন দেয়?
প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান আরও বলেন, প্রকৃত শান্তি কেবল তখনই অর্জিত হতে পারে যখন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, জাতি, জাতিগত সত্ত্বা বা বিশ্বাস নির্বিশেষে।
তিনি বলেন, যদি আমরা গাজা এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়াই, তাহলে এর অর্থ আমরা তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছি যাদের অধিকার ছিনতাই হয়েছে।
পেজেশকিয়ান এ সময় গোটা বিশ্বকে সতর্ক করে বলেন, নিপীড়ক শাসনব্যবস্থা চিরকাল টিকে থাকতে পারে না।
রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, এ পৃথিবী অনেক মূল্যবান। এটি যুদ্ধ ও অবিচারের দ্বারা ধ্বংস হতে পারে না। আসুন আমরা একসঙ্গে একটি পৃথিবী তৈরি করার জন্য কাজ করি, যেখানে মানবতা বেড়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে পেজেশকিয়ান আবারও ইরানের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার এবং চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করেন। পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে সমস্ত দেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ইরান আগ্রহী বলেও ঘোষণা করেন। সূত্র: মেহের নিউজ