‘গাজা পরিকল্পনা’ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ইউটার্ন, কী বলছে হোয়াইট হাউস?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৫ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তার ‘গাজা পুনর্বাসন পরিকল্পনা‘ থেকে পিছিয়ে আসছে। সম্প্রতি তিনি গাজার জনসংখ্যাকে মিশর ও জর্ডানে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
এ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার স্পষ্ট করে বলেছেন, গাজায় যেকোনো মার্কিন পদক্ষেপ হবে অস্থায়ী।
অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, গাজায় মার্কিন সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা নেই।
ট্রাম্পের বিতর্কিত প্রস্তাব
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখল করে সেখনকার বাসিন্দাদের (ফিলিস্তিনিদের) স্থানান্তর করবে। তিনি বলেন, ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ এবং একে পুনর্গঠন করতে হবে যেন ‘বিশ্বের মানুষ’ সেখানে বসবাস করতে পারে।
সেই সঙ্গে তিনি গাজাবাসীকে জর্ডান ও মিশরে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
তবে ট্রাম্পের এই প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি জনগণসহ আরব দেশগুলো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। কারণ তারা আশঙ্কা করছে, ফিলিস্তিনিদের যদি গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হয়, তাহলে তাদের আর ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না।
হোয়াইট হাউসের ব্যাখ্যা
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘এটি একটি মহানুভব উদ্যোগ। যার মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে গাজা পুনর্নির্মাণ ও পুনর্গঠন করা হবে। তবে এই পুনর্গঠনের সময়ে গাজাবাসীকে কিছুদিনের জন্য অন্যত্র থাকতে হবে’।
অন্যদিকে প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন যে, গাজার মানুষকে সাময়িকভাবে স্থানান্তর করতে হবে। কারণ উপত্যকাটি বর্তমানে মানব বসবাসের অযোগ্য। মানুষকে এত দুর্দশার মধ্যে রাখা অমানবিক হবে’।
পরস্পর বিরোধী বক্তব্য
তবে রুবিও ও লেভিটের এই মন্তব্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের সম্পূর্ণ উলটো। মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যদি আমরা একটি সুন্দর এলাকা তৈরি করতে পারি, যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে, নিরাপদে থাকতে পারে, হত্যা ও সহিংসতার শিকার না হয়, তাহলে সেটাই হওয়া উচিত’।
ট্রাম্পের মতে, গোটা গাজা উপত্যকা এখন ধ্বংসস্তূপ এবং সেখানে বসবাসের উপায় নেই। তিনি এ সময় ‘গাজা দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত’ বলে মন্তব্য করেন এবং একে ‘মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা বলেন।
ওইদিন ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজার দখল নেবে এবং আমরা সেখানে দুর্দান্ত কিছু করবো’।
তখন নেতানিয়াহু তার এই পরিকল্পনাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ও মনোযোগের যোগ্য’ বলে সমর্থন জানান।
ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিরা তৎক্ষণাৎ বিস্মিত হয়ে যান। তবে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে গাজার বাইরে স্থানান্তর করবে বা এই যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করবে-সে বিষয়ে তখন তিনি বিস্তারিত কিছুই বলেননি।
পরে ফিলিস্তিন, আরব দেশগুলো ও বিশ্বনেতাদের প্রবল সমালোচনার মুখে বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন তার এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এই ধারণাটি শত্রুতামূলক উদ্দেশ্যে ছিল না এবং হোয়াইট হাউসের গাজায় মার্কিন সেনা পাঠানোর কোনো ইচ্ছা নেই। সূত্র: এনডিটিভি