Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

সমুদ্রের তলদেশে ‘গুপ্তধন’, মোড় ঘুরে যেতে পারে জাপানি অর্থনীতির

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১০ পিএম

সমুদ্রের তলদেশে ‘গুপ্তধন’, মোড় ঘুরে যেতে পারে জাপানি অর্থনীতির

ছবি: সংগৃহীত

জাপানের সমুদ্রে হদিস মিলল গুপ্তধনের। জাপানের বিজ্ঞানীরা এমন কিছু মূল্যবান খনিজের ভান্ডার আবিষ্কার করেছেন যা জাপানের অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, জাপান ‘সোনার খনি’র নীচে বসে রয়েছে। নামে সোনার খনি হলেও তাতে যা পাওয়া যাবে তা সোনার চেয়েও বেশি মূল্যবান ধাতু।

জাপানের খনিজ গবেষকেরা নাকি এমন একটি অমূল্য সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন, যা আগামী কয়েক দশক ধরে সে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করে তুলবে। প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে পাওয়া গেছে পৃথিবীর বিরল খনিজের মধ্যে অন্যতম নিকেল ও কোবাল্টের ভান্ডার। রয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি এবং স্মার্টফোনের ব্যাটারির কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত ম্যাঙ্গানিজও।

২২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের সেই কুবেরের ধন হাতে এলে চীনের আধিপত্যকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা চলে আসবে জাপানের হাতে। তার ফলে বিশ্বব্যাপী খনিজ সরবরাহের মেরু পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বে বিরল খনিজ সরবরাহে চীন একচেটিয়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। গোটা বিশ্বের ৯৫ শতাংশ বিরল খনিজের চাহিদা মেটায় চীনই। জাপানের এই আবিষ্কার সম্পূর্ণ হলে চীনকে পিছনে ফেলে সামনের সারিতে উঠে আসতে পারে জাপানের নাম, এমন সম্ভাবনার কথাও শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

সে দেশের ‘দ্য নিপ্পন ফাউন্ডেশন’ ও টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষায় মিনামি-টোরি-শিমা দ্বীপের সমুদ্রতটে ঘন ম্যাঙ্গানিজের চওড়া একটি ক্ষেত্র পাওয়া গেছে।

টোকিও থেকে প্রায় ১৯৩১ কিমি দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৭০০ মিটার নীচে স্তরে স্তরে জমা রয়েছে কয়েক লাখ মেট্রিক টন কোবাল্ট ও নিকেলও। কীভাবে এই বিপুল খনিজ জমা হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে? 

নিপ্পন ফাউন্ডেশনের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১০০টিরও বেশি সমুদ্রতটে জরিপ চালিয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানীরা ২৩ কোটি টন ম্যাঙ্গানিজ আবিষ্কার করতে পেরেছেন।

লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সমুদ্রের পানিতে বইতে থাকা খনিজগুলো মরা মাছের দেহের হাড়ের সঙ্গে আটকে সমুদ্রের গর্ভে আটকে রয়েছে। সেগুলোই জমে জমে এই খনিজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে তল্লাশি চালিয়ে মোট ২৩ কোটি টন বিরল খনিজ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা।

সমীক্ষায় প্রায় ৬ লক্ষ ১০ হাজার টন কোবাল্ট এবং ৭ লক্ষ ৪০ হাজার টন নিকেলের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বিস্ময় উদ্রেক করেছে বিজ্ঞানীদের।

কোবাল্ট ও নিকেল হল দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা বৈদ্যুতিক যানের (ইভি) ব্যাটারি তৈরি করতে এবং জেট ইঞ্জিন, গ্যাস টারবাইন ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির জন্য নিকেল এবং কোবাল্টের ব্যবহার সারা বিশ্বে প্রচলিত।

কোবাল্ট রিচার্জেবল ব্যাটারির জন্য অপরিহার্য এবং সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যাঙ্গানিজের পাশাপাশি, বৈদ্যুতিক যানবাহনে ব্যবহৃত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির প্রযুক্তির জন্য এই দু’টি ধাতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রেডিং ইকোনমিক্সের পরিসংখ্যান বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক টন কোবাল্টের বর্তমান বাজারদর ২৪,৩০০ ডলার ও এক টন নিকেলের দাম ১৫,৬৭৬ ডলার। এই দাম অবশ্য সোনা বা রুপোর মতো ওঠানামা করে। বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারি শিল্পের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে দাম পরিবর্তিত হতে পারে।

সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, নিকেলের বিশাল ভান্ডার জাপানের ১১ বছরের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। একই সঙ্গে মজুত কোবাল্ট দিয়ে ৭৫ বছরের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। অভ্যন্তরীণ শিল্পগুলোকে শক্তিশালী করতে এবং প্রযুক্তি ও উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী জায়গা করে নিতে সাহায্য করবে এই খনিজ ভান্ডার, আশাবাদী সে দেশের গবেষকেরা।

সাম্প্রতিক সমীক্ষার পর টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসোর্স জিয়োলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইয়াসুহিরো কাতো বলেছেন, গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে এই খনিজক্ষেত্রটি থেকে বছরে ৩০ লক্ষ টন খনিজ উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে। সেই পরিকল্পনামাফিক এগোতে চায় জাপান সরকার।

তিনি দাবি করেছেন, সমুদ্রের স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষা করে খনিজ উত্তোলন করার কাজ করা হবে। বাস্তুতন্ত্রের কোনো ক্ষতি যাতে না হয় তার জন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করবেন খননকারীরা। এই কাজে বিদেশি প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন তিনি। চলতি বছরই এই খননের কাজ শুরু হবে।

সূত্র: দ্য এশিয়া টাইমস

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম