গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তি
অবশেষে ইসরাইলে বন্দি ফিলিস্তিনি নেতাদের বিষয়ে যা জান গেল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম
ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, ইসরাইল তাদের কারাগারে বন্দি থাকা কিছু বিশিষ্ট ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। বিনিময়ে হামাস তাদের হাতে বন্দি থাকা ইসরাইলিদের মুক্তি দেবে।
তবে, মুক্তি পাওয়া বন্দিদের তালিকা এবং সংখ্যা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত হয়নি। কারণ ইসরাইলি কারাগারে বন্দি থাকা হামাস নেতাদের সংখ্যা বা তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য তেমন কারো কাছেই নেই। কারণ, ইসরাইল এসব তথ্য কখনো ফাঁস করেনি।
যদিও কিছু সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। যার মধ্যে নারী, শিশু এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সি পুরুষরা অন্তর্ভুক্ত।
পালটা পদক্ষেপ হিসেবে ইসরাইল ১৯ বছরের কম বয়সি ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে। এক্ষেত্রে মুক্তি পেতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৯৯০ থেকে ১,৬৫০-এর মধ্যে হতে পারে।
ফিলিস্তিনি বন্দি বিষয়ক কমিশন এবং ফিলিস্তিনি কারাবন্দি সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইসরাইলের কারাগারে ১০,৪০০ ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন। এদের মধ্যে গাজার সাম্প্রতিক সংঘর্ষে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত নয়।
ইসরাইলের কারাগারে থাকা উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিদের তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো-
১. আব্দাল্লাহ আল-বারঘুতি: হামাস নেতা আব্দাল্লাহ আল-বারঘুতিকে ২০০৪ সালে ইসরাইলি সামরিক আদালত ৬৭ বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। তার বিরুদ্ধে ২০০১ এবং ২০০২ সালে একাধিক আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। যেসব হামলায় বহু ইসরাইলি নিহত হন।
কুয়েতে জন্মগ্রহণ করা বারঘুতি ১৯৯৬ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে বিট রিমা গ্রামে বসবাস শুরু করেন।
২. ইব্রাহিম হামেদ: ২০০৬ সালে গ্রেফতার হওয়া ইব্রাহিম হামেদ হামাসের আল-কাসসাম ব্রিগেডের পশ্চিম তীরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়। যে হামলার ফলে বহু ইসরাইলি নিহত হন।
৩. নাইল বারঘুতি: ১৯৭৮ সালে গ্রেফতার হওয়া হামাস নেতা নাইল বারঘুতি ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ৪৪ বছর ধরে। তাকে ‘ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
৪. হাসান সালামা: হামাস নেতা হাসান সালামাকে ১৯৯৬ সালে একাধিক আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনার দায়ে গ্রেফতার করা হয় এবং ৪৮ বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৫. মারওয়ান আল-বারঘুতি: মারওয়ান আল-বারঘুতি ফাতাহ আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত। ২০০২ সালে গ্রেফতার হওয়া মারওয়ানকে পাঁচবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৬. আহমেদ সাদাত: পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) নেতা আহমেদ সাদাতকে ২০০৬ সালে গ্রেফতার করা হয়। ২০০১ সালে ইসরাইলি মন্ত্রী রেহাভাম জেভির হত্যাকাণ্ডে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি প্রমাণের অভাবে তাকে ২০০৮ সালে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই বন্দিদের একেকজন দীর্ঘকাল ধরে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। যাদের মুক্তির কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছিল না। তবে এখন গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির ফলে তাদের মুক্তির সম্ভাবনাটি রাজনৈতিক ও মানবিক গুরুত্ব বহন করে। সূত্র: রয়টার্স