Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি: সর্বশেষ যেসব তথ্য জানা গেল

নাজমুশ শাহাদাৎ

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪১ পিএম

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি: সর্বশেষ যেসব তথ্য জানা গেল

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবং দখলদার ইসরাইল অবশেষে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিদের মুক্তি সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। দীর্ঘ ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘর্ষের পর মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ সুখবর পেল নিরীহ গাজাবাসী।

বুধবার রাতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বিশ্বকে সুখবরটি জানান।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত এই চুক্তিটি ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। 

গাজা যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ ৪২ দিনের সময়কালে হামাস ৩৩ জন বন্দির মুক্তি দেবে। যাদের মধ্যে নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং আহত ব্যক্তিরা রয়েছেন। এর বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। 

এছাড়া আল জাজিরার সূত্র অনুযায়ী, দখলদার ইসরাইল তার সেনাদের গাজা উপত্যকার সীমানা থেকে ৭০০ মিটার দূরে সরিয়ে নেবে। 

এই চুক্তি সম্পর্কে মূল যে তথ্যগুলো জানা গেছে- সেগুলো যুগান্তর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

চুক্তি সম্পর্কে

  • ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবং দখলদার ইসরাইল এই চুক্তির বিষয়ে স্বীকৃতি দিয়েছে।
  • এটি ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হবে এবং তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে।
  • যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ ৪২ দিন। এই পর্যায়ের মধ্যে রয়েছে- যুদ্ধবিরতি, গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার, বন্দিদের মৃতদেহ ফিরিয়ে দেওয়া, ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে হামাস কর্তৃক আটক ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি, গাজাজুড়ে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরিয়ে আনা এবং অসুস্থ ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার গাজা থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া।
  • দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনা প্রথম পর্যায় চলাকালে শুরু হবে।

চুক্তি অনুযায়ী, হামাস প্রথম পর্যায়ে ৩৩ জন ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেবে বলেই জানিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি। বিনিময়ে ইসরাইল হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি আরও বলেছেন, এর ফলে সমস্ত মার্কিন বন্দি তাদের বাড়িতে ফিরতে সক্ষম হবে।

চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে গাজায় মানবিক সাহায্যের প্রবাহ বাড়ানো হবে। প্রতিদিন শতাধিক লরি সেখানে পৌঁছাবে এবং গাজার চিকিৎসা সুবিধা এবং আবাসিক অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করা হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি হবে। সেই সঙ্গে বাকি জীবিত বন্দিদেরও মুক্তি দেওয়া হবে, যার মধ্যে ইসরাইলি পুরুষ সৈন্যরা অন্তর্ভুক্ত।

তৃতীয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে গাজার পুনর্গঠন করা হবে।

এই যুদ্ধবিরতি গাজায় কার্যকরভাবে যুদ্ধ থামিয়ে রাখবে, যতক্ষণ না চুক্তির শর্তাবলী বাস্তবায়িত হয়।

মধ্যস্থতাকারী দেশ— মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা চুক্তির তিনটি পর্যায়ের শর্তাবলী বাস্তবায়নে সহায়তা করবে এবং তারা কায়রোতে একটি নজরদারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে।

পক্ষগুলোর প্রতিক্রিয়া

  • ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ এই চুক্তিকে একটি প্রয়োজনীয় এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
  • ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোনে বন্দিদের মুক্তির ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
  • যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাসের গাজা শাখার প্রধান এবং সংগঠনটির আলোচনা দলের নেতা খলিল আল-হাইয়া গাজার বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে এও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ইসরাইলের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ অব্যাহত থাকবে। তিনি রাশিয়া, চীন, তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশগুলোর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, যারা ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামে সমর্থন দিয়ে গেছে।
  • হামাসের টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই চুক্তিকে ফিলিস্তিনি জনগণকে মুক্ত করার লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চুক্তি বাস্তবায়ন

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে ইসরাইলি নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করা হয়। ইসরাইলি রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ মাধ্যম কেএএন এ তথ্য জানিয়েছে।

অন্যদিকে একইদিনে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে কায়রোতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।  মধ্যস্থতাকারী একজন শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

  • জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়ন এবং গাজার বাসিন্দাদের জন্য মানবিক সাহায্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে।
  • তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে চুক্তির বিষয়কে প্রশংসা করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, এটি এ অঞ্চলের জন্য উপকারী হবে। তিনি বলেছেন, তুরস্ক ফিলিস্তিনি উপত্যকার পুনর্গঠনে তার সম্পদ মোবিলাইজ করবে এবং তাদেরকে যথাসম্ভব সাহায্য করবে।
  • তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ চুক্তিকে স্থায়ী করার আহ্বান জানিয়েছে।
  • জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজা উপত্যকায় পুনর্গঠন কাজ শুরুর আহ্বান জানিয়েছে।
  • ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য এটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের একটি অগ্রাধিকার বলে মন্তব্য করেছেন।
  • ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, এই চুক্তি গাজার বাসিন্দাদের জন্য এক ধরণের স্বস্তি। তিনি সংঘর্ষের জন্য একটি কূটনৈতিক সমাধান আহ্বান করেছেন।
  • জাতিসংঘের প্রায় ৭৫ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি গাজায় অবিলম্বে মানবিক সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
  • আরব লীগ মহাসচিব আহমেদ আবুল আল-ঘেইত গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং গাজার বাসিন্দাদের জন্য সহায়তার বৃহত্তম পরিমাণে অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে জোর দিয়েছেন।
  • মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্যের পরিমাণ প্রতিদিন ৫০০টি লরি পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। তথ্যসূত্র: তাস

ঘটনাপ্রবাহ: হামাস ইসরাইল যুদ্ধ


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম