যুদ্ধবিরতি চুক্তি কেন ইসরাইলের জন্য ‘বড় পরাজয়’?
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম
![যুদ্ধবিরতি চুক্তি কেন ইসরাইলের জন্য ‘বড় পরাজয়’?](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/01/16/major-defeat-for-Zionists-67891ea94181a.jpg)
হামাস ও ইসরাইল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে তাদের যে মূল লক্ষ্য ছিল হামাসকে সমূলে ধ্বংস করা এবং দখলকৃত ভূখণ্ডের উত্তরে বিতাড়িত ইহুদিদের ফিরিয়ে আনা, তা পূরণে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে।
আর এ কারণেই ইসরাইলি মন্ত্রিসভার কট্টরপন্থি সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ তীব্রতর হয়েছে।
৪৬৮ দিনের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
গাজায় ৪৬৮ দিনব্যাপী যুদ্ধে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী ৪৭,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও নারী রয়েছে। এছাড়া ২০ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। পাশাপাশি গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনাসহ প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।
এই যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরাইল হামাসের প্রতিরোধ শক্তিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তবে যুদ্ধবিরতির চুক্তি ঘোষণার পর হামাস তাদের সংগঠনকে পুনর্গঠন করছে বলে জানা গেছে।
কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি মূলত আলোর মুখ দেখেছে। চুক্তির শর্তগুলো মুসলিম বিশ্বে আনন্দের বার্তা দিলেও, দখলকৃত অঞ্চলের কট্টরপন্থি ইহুদি বাসিন্দাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
‘খারাপ চুক্তি’
ইসরাইলের ‘ইসরাইল হায়োম’ পত্রিকা যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে একটি ‘খারাপ চুক্তি’ অভিহিত করেছে। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের ওপর এই চুক্তিটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরাইলি মন্ত্রিসভার কট্টরপন্থি নেতা ইতামার বেন গাভির এবং স্মোট্রিচও এই চুক্তির বিরোধিতা করেছেন।
বেন গাভির এই চুক্তিকে ইসরাইলের জন্য ‘সবচেয়ে খারাপ’ সামরিক সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন এবং মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, স্মোট্রিচ ও নেতানিয়াহুর মধ্যে গোপন চুক্তি হতে পারে। এই চুক্তির মাধ্যমে নেতানিয়াহু সম্ভবত পশ্চিম তীরের কিছু এলাকা বণ্টনের বিষয়ে ছাড় দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে পরামর্শ দিয়েছে যে, হামাসকে কেবল সামরিক আক্রমণের মাধ্যমে পরাজিত করা সম্ভব নয়। এর পরিবর্তে তারা গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (ফাতাহ) পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সেক্ষেত্রে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের গোয়েন্দা প্রধান মাজিদ ফারাজকে এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
তবে গাজার জনগণের মধ্যে হামাসের প্রতি যে পরিমাণ সমর্থন রয়েছে, তা ওই মার্কিন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। গাজার জনগণ ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালের ঘটনাগুলো ভুলে যায়নি এবং তারা ফাতাহ তথা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজি নাও হতে পারে।
হামাস-পিআইজের শক্তি ও ফলাফল
এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর গাজার জনগণ হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদের (পিআইজে) প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এবং যুদ্ধজয়ের উল্লাস করেছে। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, গাজার জনগণের মধ্যে এই প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর প্রতি দৃঢ় সমর্থন রয়েছে এবং তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দিতে পারে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরাইলের কৌশলগত ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে। একই সঙ্গে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত লক্ষ্য—হামাসকে ধ্বংস করা এবং গাজার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করা—এ যাত্রায় অপূর্ণ থেকে গেছে।
ইসরাইলের এই পরাজয় একদিকে যেমন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও পিআইজের প্রতি মুসলিম বিশ্বের সমর্থনকে আরও শক্তিশালী করেছে।
অন্যদিকে ইসরাইলের মন্ত্রিসভায় কট্টরপন্থি নেতাদের মধ্যে বিভাজন এবং অসন্তোষ স্পষ্টতই এই চুক্তির রাজনৈতিক প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। ভবিষ্যতে গাজায় হামাস-পিআইজের ভূমিকাই সেখানকার পরিস্থিতি নির্ধারণ করবে। তথ্যসূত্র: মেহের নিউজ