কেন গ্রিনল্যান্ড কিনতে মরিয়া ট্রাম্প?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম
গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও গ্রিনল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের এই অভিপ্রায়ের কড়া সমালোচনা করে বলেছে, এটি বিক্রির জন্য নয়। তা সত্ত্বেও স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দ্বীপটিতে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।
ট্রাম্প জুনিয়রের গ্রিনল্যান্ড দ্বীপের এই সফর তার বাবার দ্বীপটি কেনার পরিকল্পনাকে উস্কে দিয়েছে। এর আগে ডিসেম্বরে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা নেওয়ার বিষয়ে তার প্রথম মেয়াদের পরিকল্পনকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং এটি ‘পরম প্রয়োজনীয়তা’ বলেও অভিহিত করেন তিনি।
এরপর মঙ্গলবার তাকে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রিনল্যান্ড বা পানামাখাল পাওয়ার জন্য তিনি ‘সামরিক বা অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ করবেন কি না তা জিজ্ঞেস করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘এই দুটির মধ্যে কোনোটি নিয়ে আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি না। তবে আমি এটি বলতে পারি: আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য তাদের প্রয়োজন।’
কিন্তু কী কারণে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কেনা নিয়ে এত আগ্রহী? কী আছে এতে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
অনন্য ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষের বাসস্থান। এটি সাবেক ডেনিশ উপনিবেশ এবং এখন ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। দ্বীপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় এর একটি অনন্য ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছেন। এর রাজধানী শহর নুক ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের চেয়ে নিউইয়র্কের কাছাকাছি।
ডেনিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র গবেষক উলরিক প্রাম গাদ বলেছেন, দ্বীপটিকে মার্কিন নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য।
ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন যিনি গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান। এর আগে ১৮৬৭ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন আলাস্কা কিনেছিলেন, তখন তিনি গ্রিনল্যান্ড কেনার কথাও বিবেচনা করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে, ট্রুম্যান প্রশাসন ডেনমার্ককে এই দ্বীপের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার প্রস্তাব করেছিল।
বিরল খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ
ট্রাম্পের কাছে দ্বীপটি আকর্ষণীয় হওয়ার আরও একটি কারণ হতে পারে এর প্রাকৃতিক সম্পদ। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়্যাল হলওয়ের ভূরাজনীতির অধ্যাপক ক্লাউস ডডস বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ আমানত।
দ্বীপটির প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে তেল এবং গ্যাস। সেইসঙ্গে বিরল আর্থ ধাতুও রয়েছে এই
দ্বীপে যার বৈদ্যুতিক গাড়ি এবংর বায়ু টারবাইন ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরির জন্য উচ্চ চাহিদা আছে।
বর্তমানে চীন বিশ্বব্যাপী বিরল আর্থ প্রোডাক্ট উৎপাদনে আধিপত্য বিস্তার করছে এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগেই সমালোচনামূলক খনিজ ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির রপ্তানি সীমিত করার হুমকি দিয়েছে।
বরফ গলে যাওয়ার সুযোগ
গলে যাওয়া বরফ এবং দ্রুত ক্রমবর্ধমান আর্কটিক তাপমাত্রা গ্রীনল্যান্ডকে জলবায়ু সংকটের প্রথম সারির সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করলেও জলবায়ু পরিবর্তন দেশটিকে নতুন আকার দেওয়ার কারণে কেউ কেউ অর্থনৈতিক সুযোগও দেখছে।
বরফ গলে যাওয়ার কারণে শিপিং রুট খুলে গিয়েছে। উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মকালে তাদের নেভিগেট করার সময় বৃদ্ধি করছে। আর্কটিক কাউন্সিলের মতে, বরফ গলে যাওয়ার কারণে বিগত এক দশকের মধ্যে ২০২৪ সালে আর্কটিক শিপিং ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
ডডস বলেন, আমার মনে হয়, ট্রাম্প সহজাতভাবে ধারণা পেয়েছিলেন যে আর্কটিক গলে যাচ্ছে সুযোগ তৈরি হচ্ছে। যদিও তিনি সতর্ক করেছেন, এসব রুটগুলো বেশ বিপজ্জনক এবং বরফ গলে পানি চলাচলের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক ফিলিপ স্টেইনবার্গ বলেছেন, বরফ গলার ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের সহজলভ্যতা সহজতর হতে পারে। কিন্তু জলবায়ু সংকট এখনও এর জন্য খুব একটা ‘গেম-চেঞ্জার’ হিসেবে প্রমাণিত হয়নি।
সূত্র: সিএনএন