স্বার্থের সংঘাতে পুড়ছে তেলক্ষেত্র, কী আছে সিরিয়ার ভাগ্যে?
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ পিএম
ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক স্বার্থের সংঘাতে সিরিয়ার তেল ও জ্বালানি ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ বর্তমানে এক অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটির ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
সিরিয়ার তেলের ইতিহাস: আবিষ্কার ও উৎপাদন শুরুর সময়
১৯৩৩ সালে ইরাকি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি ইরাকের কিরকুকে প্রথম তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে। যা পূর্ব সিরিয়ার দেইর এজ-জোর পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটিতে বাণিজ্যিকভাবে তেলের উৎপাদন শুরু হয় ১৯৫৬ সালে।
রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ
১৯৬৩ সালে বাথ পার্টি ক্ষমতা দখলের পর ১৯৬৪ সালে আইন প্রণয়ন করে বিদেশি কোম্পানির জন্য সিরিয়ায় তেল অনুসন্ধান ও বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭৪ সালে সিরিয়ান পেট্রোলিয়াম কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। যা দেশটির তেল ও গ্যাস উৎপাদনের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
সিরিয়ায় ১৯৮০ সালে আল-ফুরাত পেট্রোলিয়াম কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে রাষ্ট্রীয় শেয়ার ছিল ৬৫ শতাংশ। এছাড়া বিদেশি কোম্পানির অংশীদারিত্বের মধ্যে শেল এবং পেট্রো-কানাডার মতো প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে ফরাসি কোম্পানি টোটাল সিরিয়ায় কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক চাপের কারণে কোম্পানিটি নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। তবে ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে অন্যান্য পশ্চিমা কোম্পানির সঙ্গে টোটাল আবারও সিরিয়ায় ফিরে আসে। যদিও ১৯৮০ সাল থেকে সিরিয়ায় আমেরিকান কোম্পানিগুলোর উপস্থিতি হ্রাস পেয়েছে।
এসডিএফ ও মার্কিন নিয়ন্ত্রণে তেলক্ষেত্র
এদিকে মার্কিন-সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) দেশটির তেল ও গ্যাসের ৯০ শতাংশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এসডিএফর দাপট এতটাই যে, তারা দামেস্কের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে অন্যান্য বিদেশি কোম্পানিগুলোর মালিকানাধীন অবকাঠামোও দখল করে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
আমেরিকান কোম্পানিগুলোর উপস্থিতি তেমন না থাকলেও মার্কিন সামরিক বাহিনী ঠিকই সিরিয়ার তেলক্ষেত্রের এলাকায় তাদের উপস্থিতি বজায় রেখেছে। যদিও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে এসডিএফর নিয়ন্ত্রণাধীন এই তেল আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করা যায় না। তবে তা ব্যারেল প্রতি ১৫ ডলারে কালোবাজারে বিক্রি হয়। যার ফলে সাধারণ সিরিয় নাগরিকদের এ থেকে তেমন কোনো উপকারই হয় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট এসডিএফের প্রভাব বাড়তে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
কারণ, ট্রাম্প ২০১৯ সালে সিরিয়া থেকে মার্কিন সামরিক সহায়তা প্রত্যাহারের হুমকিও দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সিরিয়ার তেল রপ্তানি বজায় রাখার শর্তে সীমিত সংখ্যক মার্কিন সেনা সিরিয়ায় রাখতে রাজি হন।
তুরস্কের সম্ভাব্য ভূমিকা
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতন এবং তার মিত্রদের প্রভাব হ্রাসের কারণে আমেরিকান-কুর্দি অক্ষ এবং তুরস্ক এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো তুরস্কও সিরিয়ার তেলক্ষেত্র নিয়ে আগ্রহী। তাহরির আল-শাম গোষ্ঠীর প্রতি তাদের সমর্থনের কারণে সিরিয়ার তেলক্ষেত্রের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
পরিশেষে বলা যায় যে, সিরিয়ার তেলক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ মূলত স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। এসডিএফ, যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্ক এই ক্ষেত্রগুলোর প্রধান খেলোয়াড় হিসাবে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়। যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি