৬১ বছরের বাথ শাসনের পতন হলো যেভাবে
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম
![৬১ বছরের বাথ শাসনের পতন হলো যেভাবে](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/12/08/syria-bath-67558efa9694c.jpg)
সিরিয়ায় ৬১ বছর ধরে চলা আরব সমাজতান্ত্রিক বাথ পার্টির শাসনের নাটকীয় পতন ঘটেছে রোববার। এদিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘ শাসনামলের সমাপ্তি ঘটে।
সিরিয়ায় ১৯৬৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে। ১৯৭০ সালে হাফেজ আল-আসাদ অভ্যন্তরীণ দলীয় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হন। তার মৃত্যুর পর ২০০০ সালে তার ছেলে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং শাসন চালিয়ে যান।
যুদ্ধ ও পতনের প্রেক্ষাপট
২০১১ সালে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন বাথ সরকারের কঠোর দমননীতি এবং সহিংসতার কারণে গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং দেশটিতে মানবিক সংকট চরমে পৌঁছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে শাসকগোষ্ঠী আলেপ্পো, ইদলিব এবং হামাসহ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারায়। ২৭ নভেম্বর থেকে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং বিরোধীরা দ্রুত রাজধানীর দিকে অগ্রসর হয়।
শনিবার দামেস্কের দক্ষিণ অংশে প্রবেশ করে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। রোববার সকালে সরকারি বাহিনী রাজধানীর ওপর থেকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারায়।
বাশার আল-আসাদের বিমান দুর্ঘটনার গুঞ্জন
রোববার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার বিষয় নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম জানায়, দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর বিমানটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
দুটি সিরিয়ান সূত্র জানিয়েছে, বিমানটি আকস্মিক মোড় নেয়, যার কারণ অজানা। যা এই দুর্ঘটনার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলেছে। তবে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি কে ওই বিমানে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বার্তা
বাশার আল-আসাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি সামাজিক মাধ্যমকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমরা জনগণের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত এবং সব ধরনের সহায়তা দেবো।
এ সময় তিনি জনগণকে সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সিরিয়ার সম্পদ সব সিরিয়দের। এ দেশ আবারও স্বাভাবিক হবে এবং বিশ্বের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলবে’।
বিদ্রোহী নেতা আবু মুহাম্মদ আল-জুলানি
এদিকে বিদ্রোহী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের নেতা আবু মুহাম্মদ আল-জুলানিও দামেস্কে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালির তত্ত্বাবধানে থাকবে, যতক্ষণ না আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন হয়’।
জুলানি আরও বলেন, ‘জনগণকে অনুরোধ করা হচ্ছে, যেন সরকারি ভবন বা স্থাপনায় আক্রমণ করা না হয়। বিজয় উদযাপনের জন্য অস্ত্র ব্যবহারও নিষিদ্ধ’।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা
গত ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে আলেপ্পো, ইদলিব এবং হামাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশগুলো বিরোধী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। গত শুক্রবার দারা প্রদেশও দখলে নেয় বিদ্রোহীরা।
শনিবার সুইদা ও কুনেইত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাও বিদ্রোহীদের দখলে আসে।
আর রোববার সকালে দামেস্কের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেনারা সরে যায়।
বাথ শাসনের পতনের প্রভাব
আসাদ সরকারের এই পতনের মাধ্যমে শুধু ৬১ বছরের বাথ শাসনেরই পতন নয়, আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের একচ্ছত্র ক্ষমতারও অবসান ঘটল। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে এখন পুরো সিরিয়া এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি