কোন পথে এগোবেন ট্রাম্প?
মার্কিন সহায়তায় পশ্চিম তীর দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা ইসরাইলের
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
আগামী বছরের মধ্যেই অধিকৃত পশ্চিম তীরকে নিজেদের দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ইসরাইল। ইতিমধ্যে পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ।
আগামী বছরের শুরুতে সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণকে সামনে রেখে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রস্তুতির নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার এই আলজাজিরার প্রতিবেদন জানিয়েছে, এক বিবৃতিতে স্মোত্রিচ জানিয়েছেন, তারা আশা প্রকাশ করছেন ওয়াশিংটনের নতুন প্রশাসন ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীরের ‘সার্বভৌমত্বের’ স্বীকৃতি দেবে। এরপরই উদ্বেগ শুরু হয়েছে বিশেষজ্ঞ মহলে।
কোন পথে এগোবেন ট্রাম্প? এ নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ইসরাইলের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করবে এমন নিশ্চয়তা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।
অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়াও বেজালেল স্মোত্রিচ ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদও সামলাচ্ছেন। এছাড়া তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং এর বসতিগুলোর প্রশাসনের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে স্মোত্রিচ বলেছেন, ‘২০২৫ সাল হবে জুডিয়া এবং সামরিয়ায় (জুডিয়া এবং সামরিয়া বলতে ইসরাইল সমগ্র পশ্চিম তীরকে বোঝায়) সার্বভৌমত্বের বছর।’
এদিকে কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন উগ্রপন্থি ইহুদি নেতা বেজালেল স্মোত্রিচ। সোমবার ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে এক বৈঠকে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেটেলমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্তির ভিত্তি স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমি জুডিয়া এবং সামারিয়ায় ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রস্তুত করার নির্দেশ দিচ্ছি।
ইসরাইলের এই পদক্ষেপে ট্রাম্পের সমর্থনের আশা করে উগ্রপন্থি এ নেতা আরও বলেছেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যিনি তার প্রথম মেয়াদে তার সিদ্ধান্তে সাহস ও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তিনি এই পদক্ষেপে ইসরাইলি রাষ্ট্রকে সমর্থন করবেন।’
ইসরাইলের ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে পশ্চিম তীরকে সংযুক্তি এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতার বিষয়ে চুক্তি রয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেন স্মোত্রিচ।
তিনি বলেছেন, ‘বিপদ দূর করার একমাত্র উপায় হলো জুডিয়া এবং সামারিয়ার বসতিগুলোর ওপর ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করা।’ ইসরাইলের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিন। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেনেহ বলেছেন, স্মোত্রিচের বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে ১৯৪৮ সালে গড়ে ওঠে ইসরাইল রাষ্ট্র। এরপর গত সাত দশকে ফিলিস্তিনের ৯৫ শতাংশ এলাকা দখল করেছে জায়নবাদী রাষ্ট্রটি। বর্তমানে ফিলিস্তিন বলতে এক চিলতে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরকে বুঝায়। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল।
এখানেই থেমে নেই। গত সেপ্টেম্বরে লেবাননে শুরু করেছে সামরিক আগ্রাসন। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, লেবাননে কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না। ইসরাইল পূর্ণ শক্তি দিয়ে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে।
সম্প্রতি ইসরাইলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তকে বরখাস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এরপরই নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেন ইসরায়েল কাৎজ। এর আগে তিনি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে ছিলেন।
গত বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাত চলছে। তবে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে লেবাননে হামলা জোরদার করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। সবশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে আরও ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে হিজবুল্লাহও পালটা আঘাত হানছে।