এখন ট্রাম্পের ফৌজদারি-দেওয়ানী মামলাগুলোর কি হবে?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম
ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে আরও একবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এখন তার বিরুদ্ধে চলমান ফৌজদারি ও দেওয়ানী মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের পরিস্থিতি এটাই প্রথম। দেশটিতে আগে এমনটা কখনও হয়নি যে, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি দেশের সর্বোচ্চ পদে নির্বাচিত হয়েছেন। আর এক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পই হচ্ছেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি ফৌজদারি ও দেওয়ানী মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন।
এখানে তার প্রধান মামলাগুলোর বিস্তারিত এবং নির্বাচিত হওয়ার পর সেগুলোর সম্ভাব্য ফলাফল তুলে ধরা হলো:
১. নিউ ইয়র্কের হাশমানি মামলা
দোষী সাব্যস্ত এবং সাজার মেয়াদ: ট্রাম্প ২০২৩ সালে নিউ ইয়র্কে ব্যবসায়িক রেকর্ড বিকৃতির ৩৪টি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অর্থ দিয়েছিলেন। যা গোপন রাখতে তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়িক রেকর্ডে মিথ্যা তথ্য দেন।
সাজা নিয়ে জটিলতা: চলতি মাসের (নভেম্বর) ২৬ তারিখে ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করার জন্য নির্ধারিত তারিখ। তবে এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়ের কারণে বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এখানে প্রেসিডেন্টের জন্য কিছু আইনি সুরক্ষা স্বীকৃত রয়েছে।
বিচারক জুয়ান মার্চান যদি এই অভিযোগগুলো বাতিল না করেন, তাহলে ট্রাম্পের আইনজীবীরা সাজার তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করবেন। যা নিয়ে আপিল বিভাগ পর্যন্ত যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ মামলাটি যেহেতু একটি রাজ্য-পর্যায়ের মামলা, তাই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে ক্ষমা করার সুযোগ পাবেন না।
২. ওয়াশিংটন ডিসি এবং ফ্লোরিডার ফেডারেল মামলা
বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথের নেতৃত্বে মামলা: ট্রাম্পের দুটি ফেডারেল মামলার মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের নির্বাচনী ফলাফল উলটানোর চেষ্টার অভিযোগ এবং অন্যটি হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর গোপন নথি বেআইনিভাবে দখলে রাখার অভিযোগ।
ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে এই মামলাগুলোকে শেষ করার পরিকল্পনা করেছেন।
এ বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য, ‘ওহ, এটা খুবই সহজ ব্যাপার। এটা খুবই সহজ’।
রক্ষণশীল রেডিও হোস্ট হিউ হিউইট যখন এ বিষয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন এমনই জবাব দেন। হিউইট তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি পুনরায় নির্বাচিত হলে ‘নিজেকে ক্ষমা করবেন’ নাকি ‘জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত করবেন?’।
জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি তাকে দুই সেকেন্ডের মধ্যে বরখাস্ত করব’।
আদালতের রায় এবং প্রসিকিউশন জটিলতা:
ফেডারেল প্রসিকিউটরদের কাছে এখন পর্যন্ত মামলাগুলো চালিয়ে যাওয়ার আইনি অধিকার রয়েছে। তবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ওপর একই সুরক্ষা প্রযোজ্য হবে কিনা, তা বিচার-বিভাগীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।
৩. জর্জিয়ার RICO মামলা
স্থানীয় প্রসিকিউটরকে অপসারণের আবেদন: জর্জিয়ার ফুলটন কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ফানি উইলিসের বিরুদ্ধে ট্রাম্প অভিযোগ এনেছেন যে, তিনি একটি রোমান্টিক সম্পর্কের কারণে মামলাটি পরিচালনা করতে অযোগ্য।
যদি শুধু এই কারণেই উইলিসকে মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আর কোনো প্রসিকিউটরের পক্ষে এই মামলাটি চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
এছাড়াও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্বে থাকাকালে রাজ্য আদালতে মামলাটি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কিনা তা নিয়ে সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িত রয়েছে।
৪. দেওয়ানী মামলা
ই. জিন ক্যারল মামলা: সাবেক কলামিস্ট ই. জিন ক্যারলের করা মানহানির মামলায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হন এবং ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হন। এ নিয়ে তিনি আপিলও করেছেন। তবে আদালতের সিদ্ধান্ত এখনো পাওয়া যায়নি।
নিউ ইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেলের সিভিল ফ্রড মামলা: ট্রাম্প এবং তার ব্যবসা সংক্রান্ত একটি মামলায় প্রায় ৪৫৪ মিলিয়ন ডলার জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। ট্রাম্প এই মামলায় আপিল করেছেন এবং জরিমানার পরিমাণ কমানোর জন্য আদালতের বিবেচনার অনুরোধ করেছেন।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তার প্রশাসনের আইনজীবীকে নির্দেশ দিতে পারবেন এই মামলাগুলোকে বাতিল বা স্থগিত করার জন্য। তবে কিছু মামলা, যেগুলো অঙ্গরাজ্য-পর্যায়ে পরিচালিত হচ্ছে- সেগুলোতে তার হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা নেই।
এখন দেখার বিষয় হলো- এই সব মামলার আইনি প্রক্রিয়া এবং আপিল কি ধরনের সাংবিধানিক এবং আইনি সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ ধরনের প্রথম ঘটনাটি কোন পথে অগ্রসর হয়। সূত্র: সিএনএন