প্রিয় রাজনীতিবিদগণ, আমাদের ঘর পুড়ছে!
আহমদ মওদুদ আওসাফ
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৫ পিএম
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এক ভীতিকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ। যদিও পাকিস্তানের ইতিহাস বলছে, কোনো সময়েই শান্তি ছিল না দেশটিতে, তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলো ছিল বিশেষভাবে উদ্বেগপূর্ণ।
শহরটির সড়ক-মহাসড়কগুলো ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, অধিকার সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষ এবং একটি প্রদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের দেশটির রাজধানী শহরের দিকে মার্চ করার মতো ঘটনা- তারই প্রমাণ বহন করে।
এদিকে বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতির সময় পাকিস্তান সরকার শান্তি ও স্বাভাবিকতা বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ক্ষমতার করিডোরে মাওলানা ফজলুর রহমান (জেইউআই-এফ) উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যখন গন্দাপুর ‘বিপ্লব’ এর ডাক দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে একটি দিন স্থির করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা এখানে কীভাবে পৌঁছালাম? দোষ কাদের?
এ প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো সহজ উত্তর নেই। তবে বিষয়গুলো ততটা জটিলও নয়, যতটা মনে হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিক প্রস্তাবিত সংশোধনীটি নেওয়া যেতে পারে।
সংবিধান পুনর্লিখন
পাকিস্তান সরকার যে দ্রুততার সঙ্গে সংবিধান সংশোধন নিয়ে ভোটাভুটি করতে চায়, তা আসলে ২০ বছর আগে বেনজির ভুট্টো ও নওয়াজ শরিফের দ্বারা স্বাক্ষরিত ‘গণতন্ত্রের সনদ’ থেকে বিচ্যুতি। যদিও শাহবাজ সরকার দাবি করে যে, তারা সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে। তবে তাদের প্রস্তাবিত পরিবর্তন সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে পরিবর্তন করবে—বিশেষ করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে।
নতুন সংশোধনীতে সরকার বিচারকদের নিয়োগ করবে, যা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ করে তুলবে। এমন একটি আদালত, যেখানে বিচারকরা সরকারের দ্বারা নিয়োজিত হবেন, সেখানে আমরা কীভাবে আশা করতে পারি যে বিচার ব্যবস্থা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকবে?
যদি বিচারপতিরা কেবল সংবিধানের মামলাগুলোই শোনেন, তাহলে মামলা চলার সময় আরও দীর্ঘায়িত হবে। এর পরিবর্তে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সংখ্যা বাড়িয়ে তাদের সংবিধান-সংক্রান্ত মামলাগুলো শোনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা
পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চে অস্থিরতা আরও প্রকট। আইএমএফের উদ্ধার প্যাকেজ নিশ্চিত হওয়ার পরও, অর্থনৈতিক সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে সরকারের ওপর জনসাধারণের আস্থা দিন দিন কমছে।
একদিকে একজন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবের ডাক দিচ্ছেন, অন্যদিকে ফেডারেল সরকার জাতিসংঘে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রশংসায় ব্যস্ত। তবে একই সময়ে বিক্ষোভগুলোকেও দমন করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারকে শান্তভাবে কাজ করতে হবে, ধৈর্যশীল হতে হবে এবং বিরোধীদের কথা শুনতে হবে। বর্তমানে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, তাতে সময় এসেছে যে, সবাই নিজেদের স্বার্থকে এক পাশে রেখে জনগণের জন্য কাজ করবে।
প্রতিক্রিয়া
বর্তমানে সরকার প্রায় প্রতিটি বিষয়কে প্রথমেই উপেক্ষা করছে এবং এক ধরনের দমনমূলক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বেলুচিস্তানের পরিস্থিতিকে উল্লেখ করা যায়। ড. মহরাঙ বেলুচ ও সামি দীন বেলুচের মতো নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসার পরিবর্তে সরকার তাদেরকে দমন করার চেষ্টা করেছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, একটি পুড়তে থাকা ঘর অন্য ঘরের আগুন নেভাতে পারে না, এমনকি যদি খুব করে চায়ও।
তাই হে প্রিয় রাজনীতিবিদগণ, আপনারা আসুন, দেখুন, বুঝুন! আমাদের ঘর আগুনে পুড়ছে!
লেখক- আইনজীবী, লাহোর এবং ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও ডেইলি টাইমস-এর কলামিস্ট।