শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে শুক্রবার। এ বছর পুরস্কারটির জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এবং জাতিসংঘের প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। বিশ্বশান্তির জন্য অন্ধকারাচ্ছান্ন একটি বছরে এবারের পুরস্কারটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে আলোর মশাল হিসেবে।
চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ, সুদানে দুর্ভিক্ষ, জলবায়ু পরিবর্তন সংকটসহ অনেক বিষয় সামনে এসেছে। এ কারণে নোবেল পর্যবেক্ষকেরা শেষ মুহূর্তে এসে এবারের বিজয়ী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
চলতি বছর মোট ২৮৬ প্রার্থীর মধ্যে ১৯৭ ব্যক্তি ও ৮৯টি প্রতিষ্ঠান মনোনীতদের তালিকায় আছে বলে জানা গেছে।
নরওয়ের নোবেল কমিটি ৫০ বছর ধরে প্রার্থীদের নাম গোপন রেখে আসছে। তবে যারা মনোনয়ন দিতে পারেন, তাদের জন্য প্রস্তাবিত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করার অনুমতি আছে।
নরওয়েজীয় পিস কাউন্সিল ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘ পরিচালিত শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের মাটিতে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। পরিণতিতে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়। এক বছর ধরে চলা এ সংঘর্ষ পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ইউএনআরডব্লিউএ মূলত গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর এবং প্রতিবেশী দেশগুলোয় লাখো ফিলিস্তিনিকে সহায়তা দেয়। নরওয়েজীয় পিস কাউন্সিল বলেছে, ইউএনআরডব্লিউএ নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলে সেটি হবে কঠিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও তাদের কাজের একটি শক্তিশালী স্বীকৃতি।
ভবিষ্যদ্বাণীটি সত্য প্রমাণিত হলে জাতিসংঘের সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ লাজারিনিও শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন।
সংস্থাটির সঙ্গে হামাসের যোগসাজশ আছে বলে অভিযোগ করে আসছে ইসরাইল। নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে সংস্থাটিকে স্বীকৃতি দিলে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিতভাবে ক্ষুব্ধ হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের বিষয়টি আমলে নেওয়ার আরেকটি উপায় হতে পারে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে (আইসিজে) পুরস্কৃত করা। যুদ্ধক্ষেত্রের বদলে আদালতকক্ষে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংঘাত সমাধানের কাজ করে আইসিজে।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ আদালত নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত। এই আদালত রাশিয়াকে ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি চলতি বছরের শুরুতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফায় অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করার নিদের্শ দেন ইসরাইলকে।
এই আদেশগুলো পুরোপুরিভাবে উপেক্ষা করা হলেও তা দেশ দুটির ওপর আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে চাপ সৃষ্টি করেছিল।
পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব অসলোর (পিআরআইও) পরিচালক হেনরিক উরডাল বলেছেন, আইসিজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন নোবেল বিশেষজ্ঞ এবং ইতিহাসবিদ এসলি সিভিন। সে ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কোনো একটি সংস্থার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে তাকে এ পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।
এসলি সিভিন বলেন, জাতিসংঘ এবং বিশ্বব্যবস্থাকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার বিপজ্জনক পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করতে নোবেল পুরস্কার গুতেরেসকে এক অনন্য সুযোগ করে দেবে।
অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), দ্য ক্যাম্পেইন টু স্টপ কিলার রোবট, ওএসইসির অফিস ফর ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (ওডিআইএইচআর), সুদানের ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস এবং আফগান নারী অধিকারকর্মী মাহবুবা সিরাজ।
তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) প্রধান ড্যান স্মিথের মতে, বিশ্বজুড়ে চলমান অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে এ বছর সম্ভবত কেউই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবে না।
ড্যান স্মিথ এএফপিকে বলেন, হয়তো এখন এটাই বলার সময়, হ্যাঁ, অনেক লোক খুব কঠোর পরিশ্রম করছে। কিন্তু প্রত্যাশিত ফল আসছে না। আমরা একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আর বিষয়টি অনুধাবন করতে এবং আরও সজাগ হতে আমাদের আরও বেশি লোক ও বিশ্বনেতা প্রয়োজন।
নোবেল কমিটির সেক্রেটারি ওলাভ এনজোলস্ট্যাড এএফপিকে বলেছেন, আমি এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে এ বছরও শান্তি পুরস্কারের জন্য একজন যোগ্য প্রার্থী থাকবেন।