মোসাদ। ইসরাইলি গোয়েন্দা বিভাগ। বিভিন্ন কারণে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মোসাদ জড়িয়েছে নানারকম আলোচনা-সমালোচনায়। কখনো প্রশ্নবিদ্ধ অভিযান চালিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা কুড়িয়েছে। এসব অভিযান পরিচালনার কারণে মোসাদের ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক দিকটাই বেশি নজর কাড়ে।
মোসাদের ঝুলিতে অসংখ্য সফল অভিযান যেমন আছে, তেমনই রয়েছে একাধিক ব্যর্থতাও। তারই কয়েকটা উল্লেখ করা হলো-
খালেদ মেশাল
ইসরাইলের ব্যর্থ অভিযানগুলোর তালিকায় রয়েছে হামাসের রাজনৈতিক নেতা খালেদ মেশালকে হত্যার চেষ্টা যা একটা বড় কূটনৈতিক সঙ্কটের সৃষ্টি করেছিল। ১৯৯৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান খালেদ মেশালকে জর্ডানে বিষ ব্যবহার করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
ইসরাইলি এজেন্টরা ধরা পড়ে যাওয়ায় এই অভিযান ব্যর্থ হয়। এরপর খালেদ মেশালের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রতিষেধক সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয় ইসরাইলকে। মোসাদের তৎকালীন প্রধান ড্যানি ইয়াটম তার (খালেদ মেশালের) চিকিৎসার জন্য জর্ডানে যান।
এই হত্যার ব্যর্থ চেষ্টার উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা গিয়েছিল জর্ডন ও ইসরাইলের সম্পর্কে।
হামাস নেতা মাহমুদ আল-জাহার
২০০৩ সালে ইসরাইল গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছিল হামাস নেতা মাহমুদ আল-জাহারের বাড়ি লক্ষ্য করে। এই হামলা থেকে যদিও আল-জাহার রক্ষা পেলেও তার স্ত্রী ও ছেলে খালেদসহ আরও কয়েকজন নিহত হন। তার বাসভবনকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিল ওই বিমান হামলা।
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সামরিক অভিযানের গুরুতর প্রভাবকে তুলে ধরেছিল এই আক্রমণ।
‘লাভন অ্যাফেয়ার’
১৯৫৪ সালে, মিশরীয় কর্তৃপক্ষ ‘অপারেশন সুসানাহ’ নামে এক ইসরাইলি গুপ্ত অভিযানকে বানচাল করে দেয়।
যে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায় তা ছিল মিশরে মার্কিন ও ব্রিটিশ স্থাপনায় বোমা ফেলার। এই অভিযানের পিছনে ইসরাইলের উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাজ্যকে চাপ দেওয়া যাতে তারা সুয়েজ খালে অবস্থানরত বাহিনী বজায় রাখে।
এই ঘটনা ‘লাভন অ্যাফেয়ার’ নামে পরিচিতি পায়। ইসরাইলের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিনহাস লাভনের নামের অনুকরণে নামকরণ করা হয়েছিল। অভিযানের পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন বলে মনে করা হয়।
মোসাদকেও বিপর্যয়মূলক গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্য দায়ী করা হয়।
ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ
১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর, মিসর এবং সিরিয়া সিনাই উপদ্বীপ এবং গোলান মালভূমি পুনরুদ্ধার করতে ইসরাইলের উপর আকস্মিক হামলা চালায়।
আক্রমণের সময় হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ইহুদিদের প্রায়শ্চিত্তের দিন ইয়োম কিপ্পুরেকে। যে কারণে যুদ্ধের প্রাথমিক দিনগুলোতে ইসরাইল প্রস্তুত ছিল না।
মিশর ও সিরিয়া দুই ফ্রন্টে ইসরাইলকে আক্রমণ করে।
মিশরীয় বাহিনী সুয়েজ খাল অতিক্রম করে। প্রত্যাশিত হতাহতের মাত্র একটা অংশই তাদের আক্রমণের দ্বারা প্রভাবিত হয়। অন্যদিকে সিরিয়ার বাহিনী ইসরাইলি অবস্থানে আক্রমণ করে এবং গোলান মালভূমিতে প্রবেশ করে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন সিরিয়া এবং মিশরকে এই আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করেছিল। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার জোগান দিয়েছিল।
ইসরাইল ওই বাহিনীকে প্রত্যাহার করতে সক্ষম হয়েছিল। যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের তরফে প্রস্তাব দেওয়ার চারদিন পর ২৫শে অক্টোবর যুদ্ধ শেষ হয়েছিল।
৭ অক্টোবর ২০২৩-এর হামলা
ইয়োম কিপ্পুর হামলার প্রায় ৫০ বছর পর গতবছর, আকস্মিক আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল ইসরাইলকে। ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে গাজা সীমান্তের কাছে ইসরাইলে হামলা চালায় হামাস।
এই আক্রমণের বিষয়ে সতর্ক না করতে পারার বিষয়কে মোসাদের একটা বড় ব্যর্থতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, হামাসের প্রতি ইসরাইলের প্রতিরোধ নীতির দুর্বলতাকে প্রতিফলিত করে।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সাতই অক্টোবরের হামলার ফলে প্রায় ১২০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়াও আরও ২৫১জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
হামাসের আক্রমণের জবাবে, ইসরাইল গাজা উপত্যকায় একটি যুদ্ধ শুরু করে, যার ফলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে।
এখন পর্যন্ত ৪০,০০০জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।