১৪ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে আলাদা হলো পাকিস্তানি যমজ, অতঃপর!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম
তুরস্কের আঙ্কারায় টানা ১৪ ঘণ্টার দীর্ঘ ও জটিল অস্ত্রোপচারের পর একটি চমৎকার চিকিৎসা সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এতে ১১ মাস বয়সি এক পাকিস্তানি জোড়া লাগা যমজকে সফলভাবে আলাদা করা হয়েছে।
৬০ জন চিকিৎসকের একটি বিশাল দল টানা ১৪ ঘণ্টার দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করেছে। আলাদা হওয়া ওই জমজের নাম মিরহা ও মিনাল।
মিরহা ও মিনালের মাথা জন্ম থেকেই একত্রে জোড়া লাগানো ছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ অবস্থার কারণে তাদের বসা এবং হাতের নড়াচড়ার সমস্যাও ছিল।
তাদের পরিবার যখন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সাহায্য কামনা করে, তখন তিনি অবিলম্বে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
লন্ডনের শিশু নিউরোসার্জন ডা. ওয়াসি জিলানি প্রথমে এ অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা দেখেন। তবে যুক্তরাজ্যে এর খরচ অত্যন্ত বেশি হওয়ায় ডা. ওয়াসি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে এরদোগানের নির্দেশে কন্যা শিশুদের তুরস্কের বিলকেন্ট সিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
জটিল এ অস্ত্রোপচারটি গত মে মাসে শুরু হয় এবং দুই ধাপে সম্পন্ন হয়। তুরস্কের সার্জন ডা. হারুন দেমিরজি এবং ডা. হাসান মুরাত এরগানি এ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন।
১৯ জুলাই চূড়ান্ত অস্ত্রোপচারে সফলভাবে যমজ কন্যা শিশুদের আলাদা করা হয়। যারা জন্ম থেকে একসঙ্গে মাথার খুলিতে যুক্ত ছিল।
হাসপাতালের সমন্বয়কারী প্রধান চিকিৎসক ডা. আজিজ আহমেত সুরেল আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এ সফল অপারেশনটি তুর্কি এবং ব্রিটিশ চিকিৎসা দলের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সঠিক সংমিশ্রণকে তুলে ধরে। আজ তাদের মুখের হাসি দেখে আমরা যে আনন্দ অনুভব করছি, তা সত্যিই অবর্ণনীয়।
অস্ত্রোপচারের পর মিরহা ও মিনালের শারীরিক সমস্যাগুলো বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় সমাধান করা হয়েছে এবং তারা এখন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে।
পুনর্গঠনমূলক সার্জন ডা. হাসান মুরাত এরগানি জানান, শিশু দুটির মস্তিষ্ক আলাদা করার পর যথেষ্ট টিস্যু সরবরাহের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর, পুরো মেডিকেল দল করতালি দেয়। এটি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।
বর্তমানে যমজ শিশু দুটি ভালো আছে এবং দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তাদের হাসপাতাল থেকে ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
শিশু দুটির বাবা-মা রেহান আলি ও নাজিয়া পারভিন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও পুরো চিকিৎসা দলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবেও এরদোগানকে ধন্যবাদ জানাতে চান।
ডা. ওয়াসি জিলানি বিশ্বব্যাপী এ প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ সফলতা শুধু মিরহা ও মিনালের জন্য নয়। এটি প্রমাণ করে যে, যখন শিশুদের সাহায্য প্রয়োজন হয়, তখন পুরো বিশ্ব একত্রিত হয়ে কাজ করে। এটি একতার এক অনন্য উদাহরণ। সূত্র: সামা নিউজ