Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

জেনিন থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার, স্বাভাবিক হচ্ছে জীবনযাত্রা

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪ পিএম

জেনিন থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার, স্বাভাবিক হচ্ছে জীবনযাত্রা

অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহর থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। টানা দিনের অভিযানে পশ্চিম তীরে ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এর পরই সেখানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ধীরে ধীরে ফিরে আসতে শুরু করেছে। 

ইসরাইলি বাহিনী সম্প্রতি জেনিনে বর্বর অভিযান পরিচালনা করার পর, শহরটি একপ্রকার অচল অবস্থায় ছিল। নেতানিয়াহুর বাহিনী শহরটি ঘিরে রাখার ফলে স্থানীয় জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়ে এবং ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

গত ২৮ অগাস্ট ইসরাইলি সেনাবাহিনী পশ্চিম তীরের জেনিনসহ বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রামে সামরিক অভিযান শুরু করে। বেশ কয়েকদিনের ধ্বংসাত্মক অভিযানে সাঁজোয়া যান ও বুলডোজার ব্যবহৃত হয়। এ সময় জেনিন বাস্তু শিবির থেকে পালিয়ে যাওয়া বাসিন্দারা পুনরায় তাদের বাড়িতে ফিরে আসতে শুরু করেন। 

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই শহরে ইসরাইলি বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। 

শুক্রবার ইসরাইলি বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, তারা জেনিন এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। যদিও সরাসরি সেনা প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ করেনি। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 

জেনিনে পরিচালিত অভিযানে ইসরাইলি বাহিনী ১৪ জন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং ৩০ জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে।  সেই সঙ্গে ‘রাস্তায় পুঁতে রাখা প্রায় ৩০টি বিস্ফোরক সরিয়ে ফেলেছে’ বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। এছাড়াও তারা চারটি বিমান হামলাও পরিচালনা করেছে।

এদিকে জেনিনে সংঘর্ষ চলাকালে একজন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। হামাস ও ইসলামিক জিহাদ উভয়েই জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ১৪ জন যোদ্ধা ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা ৪৮ বছর বয়সি সাত সন্তানের বাবা আজিজ তালেব ও তার পরিবার বাড়িতে ফিরে এসে দেখেন যে, ইসরাইলি সৈন্যরা তাদের বাড়িতেও অভিযান চালিয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহকে ধন্যবাদ যে, বাচ্চারা আগের দিন এখানে ছিল না। তারা পাশের বাড়িতে ছিল। যদি তারা এখানে থাকত, তাহলে তারা (ইসরাইলি সেনা) সতর্কতা ছাড়াই তাদের মেরে ফেলত।

জেনিন শিবিরে অনেক বাড়িঘর সেনাবাহিনীর বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে এবং রাস্তাগুলোর পিচ তুলে ফেলা হয়েছে। তবে শুক্রবার ইসরাইলি সাঁজোয়া যান প্রত্যাহারের পর স্থানীয়রা তাদের নিজস্ব বুলডোজার দিয়ে ধ্বংসাবশেষ সরাতে শুরু করেন।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনা বা বসতকারীরা কমপক্ষে ৬৬১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। একই সময়ে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি হামলায় ২৩ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে। যার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইসরাইলি বাহিনী শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘরবাড়ি এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তল্লাশি করে এবং কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে আটক করে নিয়ে যায়। এ অভিযানের সময় শহরে চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়েছিল, রাস্তাগুলো প্রায় জনশূন্য ছিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল।

তবে ইসরাইলি বাহিনী জেনিন শহর থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বাসিন্দারা তাদের দৈনন্দিন কাজে ফিরতে শুরু করেছে, দোকানপাট পুনরায় খুলে গেছে এবং রাস্তায় মানুষের আনাগোনা বেড়েছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের শহরগুলোতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অভিযান নতুন কিছু নয়। প্রায়ই তারা নিরাপত্তা অভিযান চালানোর অজুহাতে তল্লাশি ও আটক কার্যক্রম পরিচালনা করে। যা ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা এ ধরনের অভিযানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরাইলি বাহিনীর এ ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

শহরের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও, এ ধরনের ঘটনার পর মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়ে গেছে এবং তারা ভবিষ্যতে আবারও এমন কোনো অভিযানের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন। সূত্র: আরব নিউজ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম