চলতি বছরের গ্রীষ্মই পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণকাল বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস।
ইউরোপজুড়ে এবার যে তাপমাত্রা ছিল তা ১৯৯১-২০২০ সালের দীর্ঘমেয়াদি গড়ের চেয়ে ১.৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি, যা ২০২২ সালের আগের সব রেকর্ডকেও ছাড়িয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, গেল আগস্ট ছিল ১৪ মাসের মধ্যে ১৩তম উষ্ণতম মাস, যখন বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছাড়িয়েছে।
যদিও যুক্তরাজ্য ২০১৫ সালের পর এবারই সবচেয়ে শীতল গ্রীষ্ম দেখেছে। তবে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ গড় গ্রীষ্মের চেয়ে উষ্ণতর অভিজ্ঞতা পেয়েছে।
তাপমাত্রা বাড়ছেই
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১৯৯১-২০২০ সালের গড়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। এটিও রেকর্ড।
কোপার্নিকাসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর উষ্ণতম বছর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছেই। এর আগে গত বছরই বিশ্বের গড় তাপমাত্রা রেকর্ড তাপমাত্রায় পৌঁছেছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, তাপপ্রবাহ এবং চরম আবহাওয়ার প্রভাব বিশ্বজুড়েই দেখা যাচ্ছে। কোপার্নিকাসের ডেপুটি ডিরেক্টর সামান্থা বার্গেস বলেন, এ গ্রীষ্মে তাপমাত্রাজনিত চরম ঘটনাগুলো আরও তীব্রভাবে দেখা দেবে।
ইউরোপজুড়ে গ্রীষ্মের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে। অস্ট্রিয়াও উষ্ণতম গ্রীষ্ম দেখেছে। আগস্টে সবচেয়ে বেশি উষ্ণতা দেখছে স্পেন ও ফিনল্যান্ড, এরপরের অবস্থানে আছে সুইজারল্যান্ড। অবশ্য ইউরোপের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে গরম থাকলেও আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, পর্তুগালের পশ্চিমাঞ্চল, আইসল্যান্ড ও নরওয়ের দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা শীতল ছিল।
‘এল নিনো’র অবসান
যদিও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য মানুষের কর্মকাণ্ডই সবচেয়ে বেশি দায়ী। তবে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নথিবদ্ধ হতে সহায়তা করেছে জলবায়ুর প্রাকৃতিক ধরন ‘এল নিনো’।
এল নিনো চলাকালে নিরক্ষরেখা বরাবর পশ্চিমমুখি বায়ুপ্রবাহ ধীর হয়ে যায় এবং পানির উষ্ণ স্রোতগুলোর পূর্বমুখি প্রবণতা দেখা দেয়। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
বিবিসি জানিয়েছে, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠে ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত এল নিনো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এ সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতর তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডলে আরও তাপ যোগ করে। যদিও এল নিনো এখন শেষ হয়েছে, কিন্তু ২০২৪ সালের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এটি ভূমিকা রাখবে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরোর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগর লা নিনার শীতল পর্যায়ে প্রবেশ করবে।
লা নিনা চলাকালে সাধারণত বৈশ্বিক তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পায়। আর এর বিপরীতে এল নিনোর সময় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।