চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যা: সুপ্রিমকোর্টের আহ্বানের পরও বিক্ষোভে চিকিৎসকরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম
কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকরা ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তার সহকর্মীরা। বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না উল্লেখ করে তাদের বিক্ষোভ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান শীর্ষ আদালত।
তবে সেই আবেদন উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট বিক্ষোভ প্রত্যাহার না করার ঘোষণা দেয়। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
তবে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট আব মেডিকেল সায়েন্স (এআইআইএমএস)। আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে দুই সপ্তাহ ধরে ধর্মঘট চালিয়ে আসছিল তারা। তাদের এই ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে সাধারণ জনতা।
এক বিবৃতিতে রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আরডিএ) জানিয়েছে, তারা সুপ্রিমকোর্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে। আবার ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনও (ফোরডা) তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে।
ফোরডা জানিয়েছে, তারা আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়াবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতীকী আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
দিল্লির অন্যান্য আবাসিক চিকিৎসক সমিতিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তারা প্রতিসপ্তাহে একবার করে শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা করার ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যদিকে এ ঘটনায় আরজি কর হাসপাতালের সাবেক প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ায় সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) তাকে পলিগ্রাফ পরীক্ষা (লাই ডিটেক্টর) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার সঙ্গে ওই রাতে ডিউটিতে থাকা আরও চার চিকিৎসককেও একই পরীক্ষার আওতায় আনা হবে। বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ আদালত এ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, যদিও পলিগ্রাফ পরীক্ষার ফলাফল আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এটি তদন্তকারীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হয়। সিবিআই গত এক সপ্তাহ ধরে সাবেক প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষকে প্রতিদিনই জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
কিন্তু তদন্তকারীদের মতে, এখন পর্যন্ত তার কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময়ে দেওয়া ভুল তথ্য এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে বিলম্ব করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে সন্দীপ ঘোষকে। সুপ্রিমকোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্ট উভয়ই তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন- কেন এটিকে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সাধারণত কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না থাকলে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়। আদালত বলেছেন, এ ধরনের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানপ্রধানের দায়িত্ব হলো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা।
ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড় জানতে চান, প্রিন্সিপাল কেন এফআইআর দায়ের করতে আসেননি? কেউ কি তাকে থামাচ্ছিল? কেন তাকে অন্য হাসপাতালে বদলি করা হয়েছিল? আদালত এর পেছনের কারণ জানতে চান।
কলকাতা পুলিশ সাবেক প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছে। জুন মাসে দায়ের করা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় পরিচালিত আরজি কর মেডিকেল কলেজে আর্থিক অনিয়মের তদন্ত চলছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টে সিবিআই অভিযোগ করেছিল যে, স্থানীয় পুলিশ চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং তারা তদন্তভার গ্রহণের আগেই অপরাধের স্থান পরিবর্তন করা হয়েছিল।
যদিও এ অভিযোগ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তীব্রভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।