রাশিয়ার আরও ভেতরে ঢুকে পড়ল ইউক্রেনের বাহিনী, বিপাকে মস্কো
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৪, ১০:১০ পিএম
টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে এই প্রথম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করার পর রুশ ভূখণ্ডের এতটা ভেতরে আর কখনো যেতে পারেনি ইউক্রেন।
রোববার এমন তথ্যই জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
টানা ছয় দিন ধরে রুশ ভূখণ্ডে অভিযান চালাচ্ছে ইউক্রেন। যুদ্ধ শুরুর পর এবারই প্রথম এমন তীব্র আক্রমণ চালাচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনারা। যার ফলে বিশেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে মস্কো।
শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী রাশিয়ার পশ্চিমের কুরস্ক অঞ্চলে হামলা অব্যাহত রেখেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি আরও বলেছেন, ‘ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এ যুদ্ধকে আগ্রাসীদের অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
রোববার এ হামলা ষষ্ঠ দিনে গড়ায়। ইতোমধ্যে ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার ভেতরে ২০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়ে গেছে বলেও জানা গেছে।
রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের এ হামলা ছিল অপ্রত্যাশিত। তারা নিরাপত্তার জন্য সীমান্তের দুই পাশ থেকেই প্রচুর মানুষকে সরিয়ে নিচ্ছে। কুরস্কের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ৭৬ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম তাস। কুরস্ক অঞ্চলের প্রতিরক্ষায় রাশিয়া ট্যাংক ও রকেট লঞ্চিং সিস্টেমও পাঠানো হয়েছে। তিন অঞ্চলে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে মস্কো। এ অঞ্চলগুলো হলো- ইউক্রেন সীমান্তবর্তী শহর কুরস্ক, বেলগোরদ ও ব্রিয়ানস্ক। এসব অঞ্চলে কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। যার মধ্যে আছে যানবাহন ও নাগরিকদের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ এবং ফোনে আড়িপাতা।
রাশিয়া জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে এক হাজারেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করে। তাদের সঙ্গে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানও ছিল। ইউক্রেনের বাহিনী বেশ কয়েকটি গ্রাম দখল করে নেয় এবং প্রাদেশিক শহর সুদজা দখলেরও সম্ভাবনা তৈরি করে।
শনিবারের ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইউক্রেনের যোদ্ধাদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, তিনি রাশিয়ায় অভিযান নিয়ে তার দেশের জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার আলেকজান্ডার সিরস্কির সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
জেলেনস্কি আরও বলেছেন, ‘ইউক্রেন প্রমাণ করেছে যে তারা ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং আগ্রাসীদের ওপর প্রয়োজনীয় চাপও সৃষ্টি করতে পারে।’
যুদ্ধের শুরু থেকেই প্রতিরক্ষায় ব্যতিব্যস্ত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার রুশ ভূখণ্ডে হামলা ও অভিযানের চেষ্টা চালিয়েছে কিয়েভ।
এদিকে রোববার দিনের শুরুতেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও সুমি অঞ্চলে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো বলেছেন, শহরে বিমান হামলার বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে এবং এ ধরনের হামলা ঠেকাতে কাজ করছে আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ইউনিট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার অনুরোধ করেছেন।
দেশটির বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কিয়েভ ও তার আশপাশের অঞ্চল এবং পূর্ব ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতা জারি আছে।