Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

হানিয়া-হত্যার নেপথ্যে ‘অমিত নাকেশ’, যা বলল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৫০ পিএম

হানিয়া-হত্যার নেপথ্যে ‘অমিত নাকেশ’, যা বলল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম

গত ৩১ জুলাই ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্ত হামলায় নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। হামাসের এক বিবৃতিতে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। পরে ইরানের বিপ্লবী গার্ডও হানিয়ার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেযেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই তেহরানে গিয়েছিলেন হানিয়া। 

হামাস এবং ইরানি বাহিনীর বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ইসরাইলি বাহিনী হানিয়ার বাসভবনে ঢুকে হামলা চালিয়েছে। এর পরই বিশ্বজুড়ে হইচই পড়ে যায়।

এরপর দাবি ওঠে, হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছে রিমোট কন্ট্রোল বোমার সাহায্যে। তাকে হত্যা করতে নাকি অন্তত দু’মাস আগে তেহরানের সেই গেস্ট হাউসে দূর নিয়ন্ত্রক বোমা বসিয়েছিল ইসরাইলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ!

৩০ জুলাই মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন হানিয়া। হামাস নেতা এদিন তেহরানে গিয়ে গেস্ট হাউসের যে অংশে ছিলেন, সেখানেই বসানো হয়েছিল বোমাটি। ৩১ জুলাই গভীর রাতে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

ইরানি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার সূত্র উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।

ইরানি প্রশাসনের অন্দরে ইসরাইলি গুপ্তচর সংস্থার ‘জাল’ অনেকটাই বিস্তৃত, হানিয়া হত্যার ঘটনা তারই প্রমাণ- দাবি মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির।

ইরানি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর দু’জন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২০ সালে ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাকরিজাদেহকে নিখুঁতভাবে রিমোট কন্ট্রোল মেশিনগানের সাহায্যে হত্যা করেছিল মোসাদ। একই পদ্ধতিতে হত্যার শিকার হয়েছেন হানিয়াও। তবে রিমোট কন্ট্রোল মেশিনগানের বদলে তাকে এবার মারা হয়েছে রিমোট কন্ট্রোল বোমার সাহায্যে।

ইরান এ হামলার জন্য ইসরাইলকেই দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।

এর পরেই প্রশ্ন উঠতে থাকে, রিমোট কন্ট্রোল বোমাটি ওই গেস্ট হাউসে রেখেছিল কারা? যখন এ প্রশ্ন ঘিরে সারা বিশ্বে কৌতূহল, তখন তুর্কি সংবাদমাধ্যমের দৌলতে প্রকাশ্যে আসে একটি নাম— অমিত নাকেশ। নাম শুনেই বোঝা যায়, লোকটি ভারতীয় বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলোও তেমনটাই দাবি করেছে। তাদের দাবি, অমিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ইসরাইলি, যিনি ইসরাইলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করেন।

তুরস্কের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে, হানিয়াকে মারতে অমিতকে কাজে লাগিয়েছিল ইসরাইল।

এমন আবহে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন তুর্কি সংবাদমাধ্যম ‘আকদেনিজ গেরেক গেজেটেসি’, ‘গুনেইডোগু এক্সপ্রেস’ এবং ‘হ্যাবার গ্লোবাল’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, মোসাদের নির্দেশে অমিত নাকেশই গিয়ে উত্তর তেহরানের ওই গেস্ট হাউসে বোমা বসিয়ে আসেন।

তুর্কি নিউজ ওয়েবসাইট ‘উসাক ওলে’ অমিতকে নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, হানিয়ার ‘আততায়ী’র নাম অমিত হওয়ার কারণে স্পষ্ট যে, তিনি একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইসরাইলি।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলোর মতো আরও বেশ কয়েকটি দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত অমিতই ছিলেন হানিয়া হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে।

এ নিয়ে হৈচৈয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেতেই প্রকাশ্যে আসে বিপরীত আরেক তথ্য। পালটা প্রতিবেদনে অমিত নাকেশ নামে কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো। এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজার পত্রিকার দাবি, ভাষার আবর্তে পড়ে মস্ত বড় ভুল করে বসেছে তুরস্কসহ অন্যান্য দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর দাবি, আসলে ‘অমিত নাকেশ’ শব্দটি হিব্রু শব্দ ‘হ্যামিটনাকেশ’-এর অনুরূপ শোনায়। হিব্রুতে ‘হ্যামিটনাকেশ’-এর অর্থ হত্যাকারী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হানিয়া হত্যার পরই ইনস্টাগ্রামে বেশ কয়েকটি পোস্ট ভাইরাল হয়। যেখানে হানিয়াকে হত্যার জন্য ‘হ্যামিটনাকেশ’কে ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একটা পর্যায়ে এই ‘হ্যামিটনাকেশ’ই হয়ে যায় ‘অমিত নাকেশ’।

তাদের দাবি, ‘অমিত নাকেশ’-এর একটি প্যারোডি অ্যাকাউন্টও সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলা হয়েছিল। সেই সব জালে পড়েই একটি কাল্পনিক চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে গল্প ফেঁদে বসে তুর্কি সংবাদমাধ্যমগুলো।

‘টাইমস অফ ইসরাইল’ এবং ‘জেরুসালেম পোস্ট’ বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে এনে বিষয়টি তুলে করে। এর প্রেক্ষিতে ওইসব প্রতিবেদনের জন্য দুঃখপ্রকাশও করে তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলো।

এদিকে হামাস প্রধানকে হত্যার জন্য ইরান ইসরাইলকে দোষারোপ করলেও, তেলআবিব এখনও এ অভিযোগ সম্পর্কে নীরব।

যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান-ইসরাইল উত্তেজনার মধ্যে বিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতেই, ইচ্ছা করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ‘অমিত নাকেশ’ নাটক সাজায় ইসরাইল নিজেই। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম