আবহওয়ার পালাবদলে প্রতিনিয়তই পাল্টাচ্ছে বিশ্বের জলবায়ু। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন। মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে দেখা দিয়েছে ভারি বৃষ্টিপাত। অতিরিক্ত বর্ষণে বাড়ছে ভূমিধস ও বন্যা। ধ্বংস হচ্ছে আবাদি জমি, নষ্ট হচ্ছে ফসল পাশাপাশি ঘটছে ব্যাপক প্রাণহানি।
এ বছর রেকর্ডব্রেকিং বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এশিয়া। চীন, ভারত, উত্তর কোরিয়া এবং পাকিস্তানে ভারি বর্ষণে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বিভিন্ন দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এএফপি।
গত মাস থেকেই আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে নেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশ চীনের। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য দিয়ে টাইফুন গেইমি আঘাত হানে। এর প্রভাব পড়ে ফিলিপাইন, তাইওয়ানসহ চীনেও। দেশটির হুনান প্রদেশে দেখা যায় ভারি বৃষ্টিপাত। হুনানে একটি বাড়ির মাটি ধসে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও নিকটবর্তী জিক্সিং শহরের কর্তৃপক্ষ বন্যায় ৩০ জন মারা গেছে এবং ৩৫ জন নিখোঁজ হয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাতে চীন এই বছর ২৫টি বড় বন্যা রেকর্ড করেছে। ১৯৯৮ সালে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এটাই ২৫ বছরে ঘটে যাওয়া সর্বোচ্চ বন্যা।
ভারি বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে ভারতেও। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের চা বাগান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতুসহ সমতল বাড়িগুলো। দেশটির কেরালা রাজ্যে ভূমিধসে ৩০৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ২০০ জন। এছাড়াও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আরও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়টি উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে উত্তর-পূর্ব চীনে ভারি বৃষ্টিপাত করেছে, ইয়ালু নদী উপচে পড়েছে, যা দুটি দেশকে বিভক্ত করেছে।
পূর্ব এশিয়ার দেশ উত্তর কোরিয়ায়ও ভারি বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে। ভারি বর্ষণে দেশটির ইয়ালু নদীর পানি উপচে পড়েছে। বৃষ্টিতে ৪,১০০টি বাড়ি, ৩,০০০ হেক্টর (৭,৪০০ একর) কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে সরকারি ভবনসহ রাস্তাঘাট ও রেলপথ। তবে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। প্রাণহানি কমাতে কোরিয়ার সামরিক হেলিকপ্টার এবং নৌবাহিনী এবং অন্যান্য সরকারি নৌকা আটকে থাকা বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছিল।
রাষ্ট্রীয় টিভি সম্প্র্রচারিত ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, কিম এবং অন্য কর্মকর্তারা রাবার বোটে চড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরীক্ষা করছেন। ফুটেজে দেখা গেছে ঘরগুলো ঘোলা পানিতে ডুবে আছে এবং সেখানে শুধু ছাদই দেখা যাচ্ছে।
পাকিস্তানে লাহোর শহরে রেকর্ড বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। আগস্টের প্রথম দিনও দেশটিতে কমপক্ষে তিনজন মারা গেছে। এর আগে জুলাই মাসে বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট নানা দুর্যোগে ৯৯ জন প্রাণ হারান। লাহোরের কিছু অংশে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩৫৩ মিলিমিটার (১৪ ইঞ্চি) বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে যা ৪৪ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙেছে। প্রবল বৃষ্টিতে পানি পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রবেশ করেছে। হতাহতদের মধ্যে দুজন শিশুও ছিল। যাদের একজন প্লাবিত রাস্তায় ডুবে যায়; অন্যজন বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে যায়।