শক্তিশালী ‘মহাজোট’ গড়ার অনুমোদন দিলেন ইমরান খান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম
পাকিস্তানে একটি শক্তিশালী সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বিদ্যমান প্ল্যাটফর্ম তেহরিক তাহাফুজ-ই-আইন-ই-পাকিস্তানকে সম্প্রসারিত করে একটি ‘মহাজোট’ গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
সম্প্রতি আসাদ কায়সার নামে ইমরানের দলের একজন সিনিয়র নেতা এ কথা জানিয়েছেন।
শুক্রবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাবেক স্পিকার আসাদ কায়সার বলেছেন, বৃহস্পতিবার ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকার বিরোধী জোট সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জিও নিউজ জানিয়েছে, কায়সার এ সময় ঘোষণা করেন, সাবেক ক্ষমতাসীন দল পিটিআই একটি শক্তিশালী সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমস্ত বিরোধী দলকে একত্রিত করবে।
তিনি বলছিলেন, খাইবার পাখতুনখোয়ার সোয়াবিতে দলটির আসন্ন শক্তি প্রদর্শনের লক্ষ্য ছিল পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্য আটক নেতাদের মুক্তির জন্য একটি ‘শক্তিশালী আওয়াজ’ তোলা।
কায়সার জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান কেবলই আইনের শাসন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে। এ সময় তিনি আকাশচুম্বী বিদ্যুৎ বিল নিয়েও বর্তমান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে তিরস্কার করেন।
নিজ ভাষণে কায়সার বলেন, বর্ধিত এই বিদ্যুৎ বিল মূল্যস্ফীতিতে বিধ্বস্ত জনগণের জন্য ‘রীতিমত মরার ওপর খাড়ার ঘা’।
পিটিআই নেতা আরও বলেন, তারা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি করা এ বিদ্যুৎ বিলের বিরুদ্ধে জামায়াত-ই-ইসলামির (জেআই) চলমান অবস্থান ধর্মঘটকে সমর্থন করেন। যা গত ২৬ জুলাই থেকে রাওয়ালপিন্ডির মুরি রোডে চলছে।
তবে জামায়াত-ই-ইসলামির আমির হাফিজ নাঈম উর রহমান বলেছেন, তার দল পিটিআই প্রস্তাবিত মহাজোটের অংশ হবে না। কারণ ইতিহাস বলে, বিরোধী দলগুলো কেবল নিজ স্বার্থের জন্যই এ জাতীয় প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকে।
বৃহস্পতিবার নাঈম উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কিছু বিষয়ে আমরা বিরোধী দলগুলোর মতোই অবস্থান ধরে রাখব এবং তাদের সঙ্গে বৈঠক করব। তবে আমরা কোনো জোটের অংশ হব না।
এদিকে একই সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই মহাসচিব উমর আইয়ুব সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে ৫ আগস্ট সোয়াবির জনসমাবেশে সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক জনসাধারণকে উপস্থিত হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার দাবি তোলার পর পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সমালোচনার জবাবে আইয়ুব বলছিলেন, তারা সংলাপের বিষয়ে কোনো আলোচনা করেননি। তবে ইমরান খান এটা পরিষ্কার করেছেন যে, পাকিস্তনের সামরিক বাহিনী জাতির জন্যই কাজ করে এবং তার বিরুদ্ধে সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিপরীতে অবস্থান করে।
সেইসঙ্গে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) দেশের সেনাবাহিনী এবং জাতির মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন।
কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে মন্তব্য করে বিরোধীদলীয় এ নেতা বলেন, তারা ইমরান খানের মুক্তির জন্য আইনিভাবে লড়ছেন।
উমর আইয়ুব এ সময় তোশাখানা দুর্নীতি মামলার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সাবেক ফার্স্ট লেডি বুশরা বিবির মুক্তি না দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোকে (এনএবি) দায়ী করেন।
পিটিআই মহাসচিব এ সময় পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) কাজী ফয়েজ ইসা এবং ইসলামাবাদ হাইকোর্টের (আইএইচসি) প্রধান বিচারপতি আমের ফারুকের প্রতি পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার মামলার শুনানি থেকে নিজদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানান।
তিনি বলেন, পিটিআই বিশ্বাস করে যে, ইমরান খান যেন জেল থেকে বেরোতে না পারেন- তা নিশ্চিত করতেই শক্তিশালী সামরিক সংস্থার নির্দেশে তাকে আরও মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) প্রথমে গ্রেপ্তার দেখায়। তবে এখন তার নামে দুই শতাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে এবং গত বছরের আগস্ট থেকে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া