হানিয়া হত্যায় কতটা প্রভাবিত হবে হামাস, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া ৬২ বছর বয়সে ইরানে নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যু হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকাণ্ডে একটি বড় পরিবর্তনের সংকেত বহন করছে। বিশেষ করে, ইসরাইলের সামরিক অভিযান এবং হামাসের আক্রমণ চলমান সংকটের মধ্যে বৃহত্তর প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরাইলি হত্যাকাণ্ড হামাসকে শেষ করতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের পদক্ষেপ সফল হবে না।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ আদীব জিয়াদেহ বলেছেন, হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক লড়াইয়ের মুখ ছিলেন।
এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে হামাসের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং গাজার অভ্যন্তরীণ সংঘাতের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।
হামাস জানিয়েছে, ‘একটি জায়নবাদী হামলায়’ তার মৃত্যু হয়েছে। গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের মধ্যে তিন ছেলের মৃত্যুর পরও হানিয়াকে অনেক কূটনীতিক মধ্যপন্থি নেতা হিসেবে বিবেচনা করতেন।
হানিয়ার তিন ছেলে- হাজেম, আমির এবং মোহাম্মদ এপ্রিল মাসে একটি ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন।
হামাস জানায়, হানিয়ার চার নাতি-নাতনি–তিন মেয়ে ও এক ছেলে–এই হামলায় মারা যান। হানিয়া তাদের মৃত্যু সম্পর্কে বলেছিলেন, আমাদের সব জনগণ ও গাজার বাসিন্দাদের পরিবার তাদের সন্তানদের রক্ত দিয়ে একটি বড় মূল্য পরিশোধ করেছে।
হানিয়া উল্লেখ করেছিলেন, যুদ্ধে তার পরিবারের অন্তত ৬০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেছিলেন, ইসরাইলের সামরিক অভিযান আমাদের জীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী।
যদিও হানিয়ার প্রকাশ্য ভাষণে কঠোর ভাষার ব্যবহার ছিল। তবে অনেক কূটনীতিক তাকে গাজার কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির সদস্যদের তুলনায় মধ্যপন্থি হিসেবে দেখতেন। তিনি হামাসের সামরিক শাখার পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিস্তারিত জানতেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। তার নেতৃত্বে হামাস শিয়া মুসলিম ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। ইসরাইলের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান।
২০১৭ সালে গাজা থেকে বেরিয়ে আসার পর, হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হন ইয়াহইয়া সিনওয়ার। তিনি একসময়ে ইসরাইলি কারাগারে ছিলেন। হানিয়া ও খালেদ মেশাল বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং কাতার-সংশ্লিষ্ট এক যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য আলোচনা করেছেন।
হানিয়া গাজা সিটির নিকটবর্তী শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং হামাসের প্রতিষ্ঠার সময় (১৯৮৭) সংগঠনটির অন্যতম সদস্য হয়ে ওঠেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ইসলামি স্টুডেন্ট ব্লকের সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন। যা পরে হামাসের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়।
২০১৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক দফতরের প্রধান হওয়ার পর, হানিয়া তুরস্ক ও কাতারের রাজধানী দোহায় বসবাস করেন। এই সময়ে তিনি গাজা উপত্যকার অবরোধ এড়িয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। হানিয়ার প্রভাবশালী ভূমিকা তাকে ইসরাইলের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করে।
৭ অক্টোবর হামাসের দ্বারা পরিচালিত আক্রমণে ১ হাজার ২০০ জন ইসরাইলি নিহত হন এবং ২৫০ জনকে গাজায় জিম্মি করা হয়। এর পরপরই ইসরাইল গাজায় একটি ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। যে অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজারের বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মে মাসে হানিয়াসহ তিন হামাস নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেছেন আদালতটির প্রধান প্রসিকিউটর।
সূত্র: রয়টার্স