ইসমাইল হানিয়া হত্যাকাণ্ড: কে আসবেন হামাসের নেতৃত্বে?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৭:১০ পিএম
ইরানে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। হানিয়ার আকস্মিক এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে তার অবর্তমানে হামাসের হাল ধরবেন কে?
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ইরানের রাজধানী তেহরানে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই নিজের আবাসস্থলে তিনি গুপ্তহত্যার শিকার হন। হামলায় হানিয়ার এক দেহরক্ষীও নিহত হয়েছেন।
ইরানে তার মৃত্যুর আগপর্যন্ত ইসমাইল হানিয়াকে ব্যাপকভাবে হামাসের সামগ্রিক নেতা হিসাবে বিবেচনা করা হতো। ২০১৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৮ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর হানিয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে মনোনীত করে। তিনি গত কয়েক বছর ধরে কাতারে বসবাস করে আসছিলেন।
এখন প্রশ্ন হল-ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটির সবচেয়ে বিশিষ্ট নেতাই বা কারা। যাদের মধ্য থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে পারেন। এখানে হামাসের সবচেয়ে বড় কয়েকজন নেতার কথা তুলে ধরা হলো। হানিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে তাদের মধ্য থেকে কেউ আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মারওয়ান ইসা
‘ছায়া মানুষ’ এবং মোহাম্মদ দেইফের ডান হাত নামে পরিচিত মারওয়ান ইসা ইজ আল-দিন আল-কাসাম ব্রিগেডসের ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ এবং হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ও সামরিক ব্যুরোর সদস্য।
খুব কম বয়সে হামাসের কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘প্রথম ইন্তিফাদা’ চলাকালীন ইসরাইলি বাহিনী তাকে আটক করে এবং এরপর পাঁচ বছর বন্দি রেখেছিল।
ইসরাইল বলছে, যতদিন তিনি জীবিত থাকবেন, হামাসের সঙ্গে তার ‘মস্তিষ্কের যুদ্ধ’ অব্যাহত থাকবে। তারা তাকে ‘কথা নয়, কাজের লোক’ হিসাবে বর্ণনা করে এবং বলে, তিনি এতটাই চালাক যে কোন ‘প্লাস্টিককেও ধাতুতে পরিণত করতে পারেন’ তিনি।
২০১৪ এবং ২০২১ সালে গাজা আক্রমণের সময় ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো তার বাড়িও দুবার ধ্বংস করেছি। সেই আক্রমণে তার ভাই মারা যায়। ২০১১ সালে ইসরাইলি সেনা গিলাদ শালিতের বিনিময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের অভ্যর্থনা করার সময় তোলা একটি গ্রুপ ছবির আগে তার চেহারা কারো জানা ছিল না।
নম-দে-গুয়েরে আবু আল-বারা নামেও পরিচিত ইসা ২০১২ সালের ‘শেল স্টোনস’ থেকে ২০২৩ সালের হামলা পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধের পরিকল্পনায় তার ভূমিকা স্পষ্ট। এতে মাঠপর্যায়ের শক্তি, গোয়েন্দা ও প্রযুক্তি বাহিনী, সংগঠিত ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার পরিধি এবং বসতি ও নিরাপত্তা সদর দপ্তরের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া- সবকিছুই তার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয়।
খালেদ মেশাল
খালেদ মেশাল হামাস আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য। ১৯৯৬ এবং ২০১৭ সালের মধ্যে তিনি রাজনৈতিক ব্যুরোর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০০৪ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিনের মৃত্যুর পর এর নেতা নিযুক্ত হন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ১৯৯৭ সালে মেশালকে হত্যার জন্য গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রধানকে নির্দেশ দেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে বলেছিলেন।
মোসাদের দশজন এজেন্ট কানাডার জাল পাসপোর্ট নিয়ে জর্ডানে প্রবেশ করে সেই সময়ে জর্ডানের নাগরিক খালেদ মেশালকে রাজধানী আম্মানের একটি রাস্তায় হাঁটার সময় বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হয়।
জর্ডানের কর্তৃপক্ষ হত্যা প্রচেষ্টার সন্ধান পায় এবং জড়িত দুই মোসাদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। জর্ডানের প্রয়াত বাদশাহ হুসেইন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মেশালকে যে বিষাক্ত পদার্থের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল তার প্রতিষেধক চান, কিন্তু নেতানিয়াহু প্রথমে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের হস্তক্ষেপে নেতানিয়াহুকে প্রতিষেধক সরবরাহ করতে বাধ্য করায় এই হত্যা প্রচেষ্টা একটি রাজনৈতিক মাত্রা নেয়।
২০১৭ সালের ৬ মে আন্দোলনের শূরা কাউন্সিল ইসমাইল হানিয়াকে রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করে।
মাহমুদ জাহার
মাহমুদ জাহারকে হামাসের অন্যতম প্রধান নেতা এবং আন্দোলনের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হামাস আন্দোলনের প্রতিষ্ঠার ছয় মাস পর ১৯৮৮ সালে মাহমুদ জাহারকে ছয় মাস ইসমাইলি কারাগারে রাখা হয়েছিল।
১৯৯২ সালে ইসমাইল থেকে মারজ আল-জুহুরে নির্বাসিত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিও ছিলেন, যেখানে তিনি পুরো এক বছর কাটিয়েছেন।
২০০৫ সালে হামাস আন্দোলন আইনসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর থেকে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিন সরকারকে বরখাস্ত করার আগপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়ার সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন জাহার।
ইসমাইল ২০০৩ সালে গাজা শহরের রিমাল এলাকায় জাহারের বাড়িতে এফ-১৬ বিমান থেকে অর্ধটন ওজনের একটি বোমা ফেলে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। হামলায় তিনি সামান্য আহত হলেও তার বড় ছেলে খালেদের মৃত্যু হয়।
২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি গাজার পূর্বে ইসরাইলি অভিযানে নিহত ১৮ জনের একজন ছিলেন তার দ্বিতীয় ছেলে হোসাম। হোসাম কাসাম ব্রিগেডের সদস্যও ছিলেন।
সূত্র: বিবিসি।