নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফর ও ইসরাইলের ভবিষ্যত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন এবং মার্কিন কংগ্রেসে চতুর্থবারের মতো ভাষণ দিতে সক্ষম হন; যা অন্য যে কোনো বিদেশি নেতার চেয়ে তাকে এগিয়ে রেখেছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে তার সর্বশেষ সফরে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতেই অভ্যস্ত ছিলেন। মার্কিন সিনেটরদের সমর্থন আদায়ে যথাসাধ্য চেষ্টাও করেন তিনি।
তবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর আচরণের প্রতিবাদে কয়েক ডজন আইনপ্রণেতা তার অনুষ্ঠান বয়কটও করেন। আর এ ইস্যুতে তার দেশের সমালোচনা করা বেশ কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিবিদকে তিনি উপেক্ষা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে নেতানিয়াহুর সর্বশেষ সফরটি এমন সময়ে হয়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনি দৌড়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে অবতীর্ণ দেশটির নেতারা। পরম মিত্র জো বাইডেন তো নেতানিয়াহুর আগমনের আগের দিনই নির্বাচনি দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
সব মিলিয়ে নেতানিয়াহু এবারের সফরে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য আগ্রহী রাজনীতিবিদদের খুঁজে পাওয়ার পরিবর্তে, গাজা ইস্যুতেই বেশি কোণঠাসা হয়েছেন।
তার মধ্যেই শনিবার অধিকৃত গোলান মালভূমির দ্রুজ সম্প্রদায় অধ্যুষিত শহরে রকেট হামলায় ১২ জন কিশোর-কিশোরী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে যায়। যে কারণে তিনি তার মার্কিন সফর সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হন।
ইসরাইল ওই হামলার জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করলেও লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীটি তা জোর গলায় অস্বীকার করেছে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ ঘটনার একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এবং বেশিরভাগ দেশ উভয় পক্ষকে দোষারোপ করা এড়িয়ে গেছে।
তবে ইসরাইলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও হিজবুল্লাহকে হামলার জন্য অভিযুক্ত করেছে। আর ইসরাইল বাইডেন প্রশাসনের এ সমর্থন এমন সময়ে পেল, যখন যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু তার দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমবর্ধমানভাবে সমর্থন হারিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। সেইসঙ্গে ওয়াশিংটনের ওপর নেতানিয়াহুর নির্ভরতা আরও গভীর হলো।
এক গাজা ইস্যুতেই ইসরাইলি নেতার অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা বর্তমানে সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার সময় নেওয়া বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে নেতানিয়াহুর অক্ষমতায় বহু সংখ্যক ইসরাইলি রীতিমতো হতাশ এবং তারা এখন তার পদত্যাগ চাইছেন।
নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন ডিসি-তে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করতে সক্ষম হন। এছাড়াও ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটদের নতুন অনুমিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও বৈঠক করেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে কমলা হ্যারিস গাজার জনগণের দুর্দশার কথা তুলে ধরে দ্রুত যুদ্ধবিরতির তাগিদ দেন। এমনকি ট্রাম্পও তখন বলেন যে, বিষয়টি খারাপভাবে দেখা হচ্ছে এবং বিশ্ব তার যুদ্ধকে ‘হালকাভাবে নিচ্ছে না’। এ কারণে ইসরাইলকে দ্রুত গাজা যুদ্ধ শেষ করতে হবে।
তবুও যুদ্ধ বন্ধ না করে উলটো হামাসকে নির্মুল করার মন্ত্রে অবরুদ্ধ গাজায় ক্রমাগত আগ্রাসন আব্যাহত রেখেছেন নেতানিয়াহু। এমনকি এখন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গেও উত্তেজনা ছড়িয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, ইসরাইলি বাহিনী বর্বর আগ্রাসন চালিয়ে গত ৯ মাসে ৪০ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯১ হাজার ফিলিস্তিনি।
গাজায় ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনে উপত্যকাটির বিস্তীর্ণ অঞ্চল খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের অবরোধের মধ্যে পড়ে রীতিমতো মৃত্যুপুরী ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি। সূত্র: আল-জাজিরা