শকুন কমে যাওয়ায় যেভাবে মৃত্যু ঘটল ৫ লাখ মানুষের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ০১:০৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ভারতে শকুনের সংখ্যা কমার ফলে মানুষের মৃত্যুর হারও বেড়েছে বলে দাবি গবেষকদের। দুই দশকেরও বেশি সময় আগে অসুস্থ গরুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি ওষুধের কারণে মারা যেতে শুরু করে ভারতীয় শকুন। ‘৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাঁচ কোটি শকুনের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে কেবল ডাইক্লোফেনাক ওষুধের কারণে। গবাদিপশুর জন্য সাশ্রয়ী ব্যথানাশক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক, যা শকুনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যেসব শকুন এই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা গবাদিপশুর মৃতদেহ খেয়েছিল সেসব শকুন কিডনি বিকল হয়ে মারা গেছে।
স্টেট অব ইন্ডিয়ার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ সালে পশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফলে কিছু এলাকায় শকুনের মৃত্যু কমতে থাকে। তবে শকুনের তিনটি প্রজাতি (সাদা শকুন, ভারতীয় শকুন, লাল মাথার শকুন) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের জনসংখ্যা ৯১ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। আর শকুন কমে যাওয়ায় দেশটিতে মানুষের মৃত্যুর হারও বেড়েছে বলে জানান গবেষকরা।
তবে বিষয়টি এখানেই শেষ হয়নি। ‘আমেরিকান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন’ জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে— অনিচ্ছাকৃতভাবে শকুন ধ্বংস হওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ লাখ লোক মারা গেছেন।
শকুন কমে যাওয়ার আগে ও পরে ঐতিহাসিকভাবে কম শকুনের সংখ্যার সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন জেলায় মানুষের মৃত্যুর হারের তুলনা করেছেন ফ্রাঙ্ক ও তার সহ-লেখক অনন্ত সুদর্শন। এ জন্য তারা জলাতঙ্কের টিকা বিক্রি, বন্য কুকুরের সংখ্যা ও পানি সরবরাহে রোগজীবাণুর মাত্রাও পরীক্ষা করেছেন।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, এ প্রভাবটি সবচেয়ে বেশি ছিল শহুরে অঞ্চলে। যেখানে বড় পরিসরে গবাদি প্রাণীর অবস্থান ও মৃতদেহের ভাগাড়ও ছিল সাধারণ বিষয়।
লেখকরা অনুমান করেছেন, ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে শকুন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার ফলে সেই সময় প্রতি বছর অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর এই অকাল মৃত্যুর জন্য প্রতি বছর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
এমনটা হয়েছিল মরণব্যাধি রোগ ও ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে, যা শকুন পরিবেশ থেকে সরিয়ে ফেলত। কিন্তু ব্যাপক হারে শকুন কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশ থেকে এসব সরানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
যেমন– সেই সময় শকুন না থাকায় খ্যাপাটে কুকুরের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যায়, যা মানুষের মধ্যে জলাতঙ্ক ছড়ায়।
সেই সময় জলাতঙ্কের টিকার বিক্রি বাড়লেও তা অপর্যাপ্ত ছিল। শকুনের বিপরীতে বিভিন্ন কুকুর সেই সময় পরিবেশের এসব পচা দেহাবশেষ পরিষ্কার করতে পারেনি। যার ফলে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও রোগজীবাণু পানিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পানিতে জীবাণুর পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যায়।
২০১৯ সালের পশু শুমারিতে ভারতে ৫০ কোটিরও বেশি প্রাণী রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। শকুন অত্যন্ত দক্ষ মেথর হওয়ায় কৃষকরা প্রচলিতভাবে গবাদিপশুর মৃতদেহ দ্রুত সরানোয় এদের ওপর নির্ভর করত।
গবেষকদের মতে, ভারতে শকুন কমে যাওয়ার বিষয়টি পাখি প্রজাতির মধ্যে রেকর্ড দ্রুততম ছিল। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রী কবুতর বিলুপ্ত হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় বিলুপ্তির ঘটনা।