বিশ্ব মানচিত্র থেকে ইরানকে নিশ্চিহ্নের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করে, যে সম্ভাবনা সব সময়ই আছে, আমি আশা করব, আমেরিকা ইরানকে পৃথিবী থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। যদি তা না হয়, তাহলে মার্কিন নেতাদের বিবেচনা করা হবে নির্বোধ কাপুরুষ হিসাবে।’ দ্য টাইমস অব ইসরাইল।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে তার দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইরানি চক্রান্ত তুলে ধরার পর তিনি এই পোস্ট করেন। অবশ্য ট্রাম্প এর আগেও প্রেসিডেন্ট থাকাকালে একাধিকবার ইরানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের হুমকি দিয়েছেন। আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হলে পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পশ্চিম এশিয়ায় সংঘাত নির্মূলের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়ানোও বন্ধ করবেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা কর্তৃপক্ষ। সেই বিবৃতিতেই এই অবস্থান ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। বিবৃতিতে ট্রাম্প ৭ অক্টোবর ইসরাইলের হামাসের হামলাকে ‘ঘৃণ্য’ বলেও আখ্যা দেন।
বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি যখন হোয়াইট হাউজে ফিরে আসবেন (দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতবেন), তখন তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার ও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়া মোকাবিলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবেন।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেছেন, ‘আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি না জিতলে মধ্যপ্রাচ্যে আরও একটি বড় ধরনের যুদ্ধ লেগে যাবে।
এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও শুরু হতে পারে।’ তিনি বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, আপনারা সবাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন। কারণ, একদল অযোগ্য লোক আমাদের দেশ পরিচালনা করছে।’
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার ফ্লোরিডায় অবস্থিত নিজ বাসভবন মার-এ-লাগোতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। তার আগে তিনি নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী সারা নেতানিয়াহুকে নিজ বাসভবনে স্বাগত জানান। বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তার সঙ্গে নেতানিয়াহুর ভালো সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই। তিনি বলেন, ‘আমি ইসরাইলের প্রতি সব সময়ই ইতিবাচক ছিলাম যে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে। আমি অনেকগুলো কাজ করেছি: গোলান মালভূমি (ইসরাইলি বলে স্বীকৃতি দিয়েছি), জেরুজালেমকে রাজধানী করেছি প্রকৃতপক্ষে আমরা সেখানে আমাদের দূতাবাস স্থাপন করেছি... এবং ইরানের পারমাণবিক চুক্তিও করেছিলাম।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, বাইডেন প্রশাসন ইরান ইস্যুতে কোনো কিছুই করেনি। আমরা ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বের হয়েও এসেছিলাম, যা এককথায় অসাধারণ একটি বিষয় ছিল। হয়তো ইসরাইলের জন্য আমি যা করেছি তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা কাজ ছিল এটি। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন এই ইস্যুতে কোনো কিছুই করেনি।’
সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে পারতাম এবং এটি হলে তা সবার জন্যই ভালো হতো। এমনকি ইরানের জন্যও... হয়তো এটিই মধ্যপ্রাচ্যকে রক্ষা করত।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু তিনি (কমলা হ্যারিস) এখন (বাইডেনের) জায়গা নিয়েছেন এবং তিনি তার চেয়েও খারাপ।’