যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী নভেম্বরে। এ মূহূর্তে মনোনয়ন প্রার্থী জো বাইডেন সরে দাঁড়িয়েছেন। তার স্থানে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিস সমর্থন পেয়েছেন। আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় ভোটে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মোকাবিলা করতে যাচ্ছেন কমলা। ফলে ভোট ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। তবে ট্রাম্পের চেয়ে জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে রয়েছেন কমলা। ‘ট্রাম্প জোয়ার’ রুখতে পারবেন তো কমলা হ্যারিস? পারবেন কি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হতে?
এসব প্রশ্ন সামনে এনে শুরু হয়েছে পর্যালোচনা। বিবিসি জানিয়েছে, মনোনয়ন না হয় পেলেন কিন্তু ভোটে জেতার জন্য কি পাচ্ছেন কমলা হ্যারিস?
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রোববার বাইডেন এক বিবৃতিতে ঘোষণা দেন, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সেবা করা সবচেয়ে বেশি সম্মানের কিন্তু সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত তার দল ও দেশের সর্বোত্তম স্বার্থে।
বাইডেন তার প্রথম বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতায় উত্তরসূরি হিসেবে কমলার নাম বলেননি। তবে কিছুসময় পর সেটি পরিষ্কার করেন।
অপর বিবৃতিতে কমলাকে সমর্থন জানিয়ে বাইডেন বলেন-তার নাম প্রস্তাব করতে পেরে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি।
কমলাকে বাইডেন বলেন, তার মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে, তিনি ভোটে প্রার্থী হবেন এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনিই জিতবেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধও করবেন কমলা।
এত দিন প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে থাকা বাইডেন হঠাৎ সরে দাঁড়ানোয় কমলা সুযোগ পাচ্ছেন ঠিকই, তবে সেটি ট্রাম্পকে পরাজিত করার জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানায় বিবিসি।
বাইডেন যেদিন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন, সেদিনও প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন কমলা। প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার চূড়ান্ত টিকেট পাওয়ার পর্বটি সহজে পার হওয়ার সুযোগ পাবেন কমলা কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন নভেম্বরে ট্রাম্পকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন, সেই চ্যালেঞ্জ এখন তার সামনে। কমলার মনোনয়ন ডেমোক্র্যাটদের শক্তি বাড়াবে, এটা ঠিক কিন্তু বাইডেনকে ঘিরে দলটির দুর্বলতাও তো প্রকাশ্যে এসেছে।
কমলার প্রার্থীতা চূড়ান্ত হলে বাইডেনের বয়সকে যেভাবে নির্বাচনি প্রচারের অস্ত্র বানিয়েছিল রিপাবলিকানরা ঠিক উল্টো হবে ট্রাম্পের বয়স নিয়ে। ট্রাম্পের বয়সকে প্রচারের অস্ত্র বানাতে পারবেন ডেমোক্র্যাটরা। ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়ে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বয়সের দিক থেকে তিনি বাইডেনকেও ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বুড়ো প্রেসিডেন্ট হবেন। নির্বাচিত হয়ে চার বছর মেয়াদের পুরোটা ক্ষমতা থাকলে ২০২৮ সালে ট্রাম্পের বয়স দাঁড়াবে ৮২ বছর। আর বাইডেন তার ৮১-তে আছেন। কমলার বয়স এখন ৫৯ বছর। সে হিসাবে ট্রাম্পের চেয়ে তিনি যোগ্য বলেই বিবেচিত হবেন।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যে কারণে মেডিকেল পরীক্ষা করিয়ে সেসব রিপোর্ট প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
বিবিসির মতে, এত কিছুর পর প্রকৃতপক্ষে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লড়াইর পথ তৈরি হয়েছে, যেখানে ডেমোক্র্যাটদের চাঙ্গা হওয়ার মতো অনেক উপাদান রয়েছে। প্রেসিডেন্ট পদে কমলার প্রার্থিতায় উঠে আসা গত তিন সপ্তাহ ধরে ৮১ বছর বয়সি বাইডেনকে ঘিরে ডেমোক্র্যাট শিবিরে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল, সেটি কেটে গেছে এবং তাদের মধ্যে নতুন শক্তির সঞ্চার হয়েছে।
কমলার প্রার্থিতা চূড়ান্ত হলে ডানপন্থিদের ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন তিনি। এছাড়া দোদুল্যমান ভোটের রাজ্যগুলোতেও ভিত শক্ত হবে ডেমোক্র্যাটদের।
ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে ডলার যোগের মধ্য দিয়েই। কমলার প্রচার শিবিরের তথ্য অনুযায়ী, বাইডেন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার মুহূর্ত থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় নির্বাচনে ব্যয়ের জন্য কমলা ৮ কোটি ডলার তহবিল জোগাড় করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে কোনো প্রার্থীর একদিনে সংগ্রহ করা তহবিলের চেয়ে বেশি। এই পরিমাণ অর্থ নির্বাচনি প্রচার জোরদার করতে বিশাল ভূমিকা রাখবে।