ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের ভবিষ্যৎ নিয়ে যা বললেন আলি বাকেরি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৪, ০৭:৩৬ পিএম
গত ৯ মাসে ইসরাইলি বাহিনী গাজায় নৃশংস অপরাধযজ্ঞ চালিয়েও পরিস্থিতিকে নিজেদের অনুকূলে নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাকেরি কানি।
বুধবার নিউ ইয়র্কে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন’র সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়াকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য বাকেরি কানি নিউ ইয়র্ক সফর করেন।
ইরানি মন্ত্রী এ সময় বলেন, ইসরাইল যত বেশি উত্তেজনা ছড়াবে এবং অপরাধযজ্ঞ চালাবে তত বেশি তারা মারাত্মক ঝুঁকি ও বিপদের মধ্যে পড়বে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আলি বাকেরি বলেন, ৭ অক্টোবরের আগে ইরাক বা ইয়েমেন থেকে ইসরাইলের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু ৭ অক্টোবরের পরে তা হয়েছে। ৭ অক্টোবরের আগে ইরান অবৈধ ইসরাইলের ভেতরে কখনো হামলা চালায়নি, কিন্তু ৭ অক্টোবরের পরে তা ঘটেছে। ইসরাইল দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ইরানি কমান্ডারকে হত্যা করে। এরপরই তারা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। কাজেই গত ৯ মাসে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ যত বেড়েছে তাদের বিরুদ্ধে হুমকিগুলোও তত বেশি বাস্তব রূপ লাভ করেছে।
লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলি হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইরান কখনোই এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির পক্ষে নয়। সিএনএনের এক প্রশ্নের জবাবে আলি বাকেরি বলেন, অন্যত্র সংঘাত ও উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তাটা কৌশলগত ত্রুটি। এর ফলে ইসরাইল লাভবান হতে পারবে না, বরং তারা আরও মারাত্মক বিপদে পড়বে।
ফিলিস্তিনে দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান ইস্যুতে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চান সিএনএনের উপস্থাপক ফরিদ জাকারিয়া। তার প্রশ্নের উত্তরে ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে বলেন, কেবল ফিলিস্তিনের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে।
তিনি বলেন, ইরানের প্রস্তাব হলো- ফিলিস্তিনি জনগণের অংশগ্রহণে একটি গণভোট আয়োজন করা; যারা এখন দখলকৃত ভূখণ্ডের ভেতরে আছে এবং যারা ইসরাইলের চাপের কারণে অধিকৃত অঞ্চল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে- সবাই এই গণভোটে অংশ নেবে। ফিলিস্তিনের মুসলিম, খ্রিস্টান বা ইহুদিরা এই গণভোটে অংশগ্রহণ করবে এবং তারাই দেশের ভবিষ্যৎ ও তাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে।
আলি বাকেরি বলেন, ফিলিস্তিনের আসল মালিক ফিলিস্তিনিরাই, কখনোই বহিরাগত ইহুদিরা ফিলিস্তিনের মালিক হতে পারে না।
এসময় পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, কেন নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ব্রাসেলস বা বিশ্বের অন্য জায়গা থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে? তাদের এমন অধিকার কে দিয়েছে? ফিলিস্তিনি জনগণ কি নিউইয়র্কে বসে তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কাউকে দিয়েছে? কেন আমরা ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে দিচ্ছি না?
ইরানের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেটাই সবচেয়ে যৌক্তিক, গণতান্ত্রিক এবং স্থিতিশীল সমাধান বলে মন্তব্য করেন আলি বাকেরি কানি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হত্যা-প্রচেষ্টায় ইরানের জড়িত থাকার অভিযোগ এবং জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে ইরানের এই মন্ত্রী বলেন, ইরান তার অধিকার নিশ্চিত করতে এবং জেনারেল সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনি ও বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে এবং এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে।
সাক্ষাতকারে ইরান-সৌদি সম্পর্ক এবং সৌদি যুবরাজের ইরান সফরের সম্ভাবনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের সফরের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং বিষয়টি দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচিতে রয়েছে। সূত্র: ইরনা