Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

অনিশ্চয়তায় মার্কিন সমর্থন, কী করবে ইউক্রেন?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪১ পিএম

অনিশ্চয়তায় মার্কিন সমর্থন, কী করবে ইউক্রেন?

রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় ৩০ মাস ধরে সংঘাতের পর, যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে ইউক্রেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন সমর্থনের অনিশ্চয়তার কারণে দেশটি এখন বিপাকে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় উপকারকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের রাজনৈতিক ও সামরিক সাহায্য পেয়েই এতদিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে টিকে ছিল দেশটি। তবে সম্প্রতি সেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক সাহায্য পেতে ৬ মাসের বিলম্ব হওয়ায়, তা রুশ বাহিনীকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে সুযোগ দিয়েছে। যার ফলে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা এখন রাশিয়ার বৃহত্তর এবং উন্নত-সজ্জিত সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় ধীর-স্থির হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে মাইকেল কফম্যান নামে কার্নেগি এনডাউমেন্টের এক সামরিক বিশ্লেষক সম্প্রতি এক পডকাস্টে বলেছেন, ‘সামনের দুই বা তিন মাস সম্ভবত ইউক্রেনের জন্য চলতি বছরের সবচেয়ে কঠিন হতে চলেছে।’

চলমান যুদ্ধের পটভূমিতে লুকিয়ে থাকা ইউক্রেনের জন্য আরেকটি বিরক্তিকর উদ্বেগের বিষয় হলো- দেশটির প্রতি পশ্চিমা রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন ঠিক কতদিন স্থায়ী হতে যাচ্ছে, তা! 

কেননা গত সোমবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওহিও সিনেটর জেডি ভ্যান্সকে তার নির্বাচনি রানিংমেট হিসাবে বেছে নিয়েছেন। আর ভ্যান্স চান যে, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত থাকুক। অগত্যা হাজার হাজার মাইল দূরের যুদ্ধ নিয়ে নয়। যদিও তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে পুতিনের আক্রমণ করাটা ভুল ছিল।

ভ্যান্সের এই দৃষ্টিভঙ্গি ট্রাম্পের নিজস্ব অবস্থানের সঙ্গেও জড়িত। ট্রাম্পও সম্প্রতি দাবি করেছেন, নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি জানুয়ারিতে তার প্রথম কার্য দিবসের আগেই এই সংঘাতের অবসান ঘটাবেন। তবে সেটা ঠিক কীভাবে করবেন, তা বলতে রাজি হননি সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতির দায়িত্ব পালন করা হাঙ্গেরির রাশিয়াপন্থী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান সম্প্রতি যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে পুতিন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। এতে ইইউ নেতারা স্বাভাবিকভাবেই তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এমনকি তারা বুদাপেস্টে আসন্ন ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলন বয়কটের পরিকল্পনাও করছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই যুদ্ধে ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিকসহ উভয় পক্ষের হাজার হাজার সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। যা শিগগিরই শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। উপরন্তু কিয়েভে আরও বিলিয়ন ডলার সাহায্য পাঠানোর পশ্চিমা ইচ্ছাকে নষ্ট করার আশায় পরিকল্পনা আঁটছেন পুতিন।

এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন সামনের দিনগুলোতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মতে, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করা রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর থকে গত মে মাস পর্যন্ত দেশটির প্রায় ১৮ শতাংশ ভূখণ্ড দখলে নিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে অ্যাভডিভকার পূর্ব দুর্গ দখল করার পর রাশিয়া আর কোনো বড় যুদ্ধক্ষেত্রে জয়লাভ করতে পারেনি। তবে রুশ বাহিনী এখন সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ, পূর্বের দোনেৎস্ক এবং দক্ষিণের জাপোরিঝিয়া দখলে নিয়েছে।

ইউক্রেন যদিও পশ্চিমা সরবরাহ ব্রিগেড পৌঁছানো পর্যন্ত রুশ সেনাদের পরাস্ত করার জন্য কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিয়ে একটি স্থিতিস্থাপক প্রতিরক্ষা কৌশল প্রয়োগ করেছে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, যদি ইউক্রেন বিস্ময়কর উপাদান ব্যবহার করে হামলা চালাতে না পারে, রাশিয়া নিঃসন্দেহে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জয়ী হবে।

সম্প্রতি রাশিয়া দাবি করেছে যে, তার বাহিনী উরোঝাইনের দোনেৎস্ক গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, সেখানে এখনও লড়াই চলছে। রুশ সেনাবাহিনী কাছাকাছি কৌশলগত পাহাড়ি শহর চাসিভ ইয়ারকে দখলে নিতে চায়, যা তাদেরকে দোনেৎস্ক দখলে নিতে সাহায্য করবে।

ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার নামক ওয়াশিংটনের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মতে, ইউক্রেনের বাহিনী উত্তর-পূর্ব খারকিভ শহরের চারপাশে জড়ো হওয়া রুশ সেনাবাহিনীকে মূলত আটকে রেখেছে। ক্রেমলিনের সৈন্যরা শহরটির আর্টিলারি রেঞ্জের মধ্যে প্রবেশের চেষ্টা করছে এবং ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে এ অঞ্চলে একটি বাফার জোন তৈরির চেষ্টা করছে।

এদিকে রুশ বাহিনী অঞ্চলটির কাছাকাছি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা সেখানকার বেসামরিক অবকাঠামোতে আঘাত করেছে। গত সপ্তাহে রুশ বাহিনী একটি বড় ধরনের বিমান হামলা চালায়, যা কিয়েভে ইউক্রেনের বৃহত্তম শিশু হাসপাতালে আঘাত করে। এতে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।

ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহকে বিচ্ছিন্ন করাই রাশিয়ার নিরলস দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার মূল লক্ষ্য।

এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ বোমা হামলায় ইউক্রেনের ৮০ শতাংশ তাপবিদ্যুৎ এবং এক-তৃতীয়াংশ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ধ্বংস হয়েছে।

এ নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে ইউক্রেনের জন্য বেশ কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।

জেলেনস্কি সোমবার বলেছেন, ইউক্রেন এত বড় একটি দেশ যে, একে রক্ষা করার জন্য বিশাল বিমান প্রতিরক্ষার প্রয়োজন হবে। দেশটির আকাশসীমা সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করার জন্য অন্তত ২৫টি প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের প্রয়োজন।

রুশ হামলায় এরইমধ্যে ইউক্রেনের গোলাবারুদের ভাণ্ডার সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। যদিও নতুন সামরিক সহায়তা একে গুছিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। তবুও কিয়েভের সেনাবাহিনীর ক্ষয়প্রাপ্ত মজুদ সম্পূর্ণরূপে পূরণ করতে আরও সময় লাগবে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছরের শেষের দিকে ইউক্রেন পাল্টা আক্রমণ শানাতে সক্ষম হবে না।

অন্যদিকে রাশিয়া এই যুদ্ধে তার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রতিরক্ষা খাতে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে।

রাশিয়ার মূল কৌশল হলো- ইউক্রেনের শহর ও গ্রামগুলোকে টুকরো টুকরো করে ফেলা, সেগুলো বসবাসের অযোগ্য করে দেওয়া এবং ইউক্রেনীয়দের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাকে দুর্বল করা। প্রথমে শক্তিশালী গ্লাইড বোমা দিয়ে ভবনগুলো গুড়িয়ে দেবে, তারপর রুশ পদাতিক বাহিনী সেখানে প্রবেশ করবে।

ইউক্রেন তার প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে প্রথমদিকে ব্যর্থ হলেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তা অনেক উন্নত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

জেলেনস্কি সোমবার বলছিলেন যে, প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা এখন ভালোই চলছে। যদিও নতুন সেনাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ভিত্তি তার দেশে নেই। এছাড়াও ১৪টি ব্রিগেড এখনও তাদের প্রতিশ্রুত পশ্চিমা অস্ত্র পায়নি আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

ইউক্রেনে যাতে দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা সহায়তা এবং সামরিক প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখ হয়, তা নিশ্চিতে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো চলতি মাসেই একটি পদক্ষেপ নিয়েছে।

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানকারী জোট নেতারা আরও স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। যা মূলত একটি বহনযোগ্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

ইউক্রেনও এখন ইউরোপীয় দেশগুলোর দেওয়া প্রথম এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তবুও জেলেনস্কি হতাশ। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন এই যুদ্ধে জিততে পারবে না, যতক্ষণ না রাশিয়ার ভূখণ্ডে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার অস্ত্র ব্যবহারের সীমা বাতিল না করে।সূত্র: ডেইলি সাবাহ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম