শুরুতেই পেজেশকিয়ানকে খামেনির সতর্কবার্তা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৩ পিএম
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন সংস্কারপন্থি আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান। কট্টর রক্ষণশীল প্রতিদ্বন্দ্বী সাঈদ জালিলিকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন তিনি।
শনিবার পেজেশকিয়ানকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এরপরপরই নতুন প্রেসিডেন্টকে দেশের অচলাবস্থা সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছেন ইরানের শীর্ষ সুন্নি আলেম মৌলভী আব্দুলহামিদ। রোববার ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
আব্দুলহামিদ বলেছেন, দেশের চলমান নানা ইস্যুতে ইরানিরা ক্লান্ত। তারা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছে। তিনি আরও বলেছেন, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে জনগণ কতটা সরকারের উপর বিরক্ত। দেশটিতে গত ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। যা দেশটির ইতিহাসে সর্বনিম্ন। প্রথম দফায় ৪ জন প্রার্থীর কেউই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট নিশ্চিত করতে পারেননি।
এরপর দ্বিতীয় ধাপে গড়ায় নির্বাচন। যদিও দ্বিতীয় ধাপে ভোটার উপস্থিতি ১০ শতাংশ বেড়েছে। তবে ৫০ শতাংশ ভোট দানে বিরত ছিল। শীর্ষ এই আলেম বলেছেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক চাপে ইরানিরা পিষ্ট। এখানে নিম্নশ্রেণির মানুষেরা নিজেকে এখন ধ্বংসস্তূপের সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে তারা ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার দাবিতে অটল থাকবে। দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা, সুন্নি ও বেলুচ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের অভাব নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মৌলভী আব্দুলহামিদ।
এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান একজন স্বল্পপরিচিত সংস্কারপন্থি রাজনীতিবিদ। হৃদরোগের চিকিৎসক থেকে তিনি দেশটির ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির নতুন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহও রয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, মাসুদ পেজেশকিয়ানকে ভোট দেওয়া অধিকাংশ মানুষই শহুরে মধ্যবিত্ত এবং তরুণ। তারা ইসলামপন্থী গোঁড়ামির কারণে ইরানে বহু বছর ধরে চলমান সামাজিক নিরাপত্তা লঙ্ঘনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তবে সাধারণ ইরানিরা মনে করছেন, সংস্কারপন্থী পেজেশকিয়ান চেষ্টা করলেও দেশটির শাসক তাকে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন করতে দেবে না।
অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি জনগণের কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সব প্রার্থী ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে জড়িত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যে বার্তা দিয়েছেন তাতে এই আহ্বান জানান তিনি। মহান আল্লাহর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন খামেনি। তার বক্তৃতার শুরুতে তিনি বলেছেন, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে ইরানি জাতি তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছে। আমি জাতিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি দেশের মর্যাদা ও চির-প্রবর্ধমান অগ্রগতির জন্য সবাইকে সহযোগিতার ও সুচিন্তার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতার মনোভাব এখন বন্ধুত্বে পরিণত হওয়া জরুরি এবং প্রত্যেকের উচিত দেশের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য যথাসম্ভব সব প্রচেষ্টা চালানো। দুই দফায় ৫৫ মিলিয়নেরও বেশি ভোটদাতা জনগণের ও নির্বাচনে জড়িত কর্মকর্তাদের দক্ষতার ও দায়িত্ব অনুভূতির প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, অচলাবস্থা আর হতাশা সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচন বর্জনের জন্য শত্রুদের ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও জাতি এক অবিস্মরণীয় ও উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে।
খামেনি আরও বলেছেন, নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে শহিদ প্রেসিডেন্ট রাইসির পথে চলা অব্যাহত রাখার এবং দেশের বিপুল সামর্থ্যগুলো কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বিপ্লবী যুব সমাজ ও বিশ্বাসী জনশক্তিকে এক্ষেত্রে নিয়োগের আহ্বান জানান যাতে জনকল্যাণ ও দেশের অগ্রগতির পথ সুগম হয়। এছাড়াও ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) বলেছে, এই বাহিনী নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।