ব্রিটেনে গাজাপন্থিদের কাছে হেরেছেন লেবার পার্টির প্রার্থীরাও
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:১২ পিএম
ফিলিস্তিনের পতাকা
ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি জিতলেও দলটির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু এলাকায় তাদের প্রার্থীরা গাজাপন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরে গেছেন। এছাড়া আরও অনেকে পড়েছেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
এর মধ্যে দলটির জন্য বড় আঘাত হলো শ্যাডো মিনিস্টার জনাথন অ্যাশওয়ার্থ লেস্টারের সাউথ আসনে হেরে যাওয়া। যেখানে আগে প্রায় ২২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেছিলেন তিনি।
১০ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোট আছে এমন আসনগুলোতে লেবার পার্টির ভোট কমেছে গড়ে ১১ শতাংশ।
ইলফোর্ড নর্থে শ্যাডো স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং আগে জয়লাভ করেছিলেন ৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে। এবার তার জয়ের পার্থক্য মাত্র ৫২৮ ভোট। তবে জর্জ গ্যালাওয়ের কাছ থেকে রোচডেলের আসন পুনরুদ্ধার করেছে লেবার প্রার্থী পল ওয়াহ।
বিবিসি জানিয়েছে, যেখানে মুসলিম ভোটার বেশি সেখানেই দলটি খারাপ করেছে। যতটুকু জানা যাচ্ছে, লেবার পার্টি অধিক মুসলিম জনগোষ্ঠী আছে এমন পাঁচটি আসনে হেরে গেছে। এর মধ্যে চারটিতে স্বতন্ত্র আর একটিতে কনজারভেটিভ প্রার্থী জয়ী হয়েছে।
লেস্টার সাউথ আসনে শোকাত অ্যাডাম ৯৭৯ ভোটে জয়ের পর ঘোষণা করেছেন ‘এটা গাজার জন্য’। এই আসনে ৩০ শতাংশ ভোটার মুসলিম। ১৩ বছর ধরে অ্যাশওয়ার্থ আসনটি ধরে রেখেছিলেন।
কাছেই লেস্টার ইস্ট আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কয়েক হাজার ভোট পাওয়ায় সুবিধা পেয়েছেন কনজারভেটিভ প্রার্থী। বিশেষ করে সাবেক লেবার এমপি ক্লাউডিয়া ওয়েব্বের এলাকায়।
মিস ওয়েব্বে হয়রানির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। তবে তিনি ফিলিস্তিনপন্থি হিসেবে সোচ্চার কণ্ঠ। তার সাবেক আসনে টোরি প্রার্থী জয় পেয়েছে ৪ হাজার ৪২৬ ভোটে, যা ওয়েব্বের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে কম।
বার্মিংহামের পেরি বার এলাকা লেবারের খালিদ মাহমুদ ৫৭০ ভোটে হেরে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়ুব খানের কাছে।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যারা গাজাকেই তাদের প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন তারা ডিউজবুরি, বাটলে, ব্ল্যাকবার্ন এলাকায় জয়ী হয়েছেন, যেখানে আগে লেবার পার্টির ভালো সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল।
মুসলিম জনগোষ্ঠী বেশ বড় এমন আরও কিছু এলাকায় সিনিয়র লেবার নেতারা খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতে পেরেছেন।
ইলফোর্ড নর্থে স্বতন্ত্র প্রার্থী লিয়ানে মোহামাদ, যিনি একজন ফিলিস্তিনি শরণার্থীর নাতি, স্ট্রিটিংয়ের চেয়ে মাত্র ৫২৮ ভোট পেছনে ছিলেন।
বার্মিংহাম লেডিউডে ছায়া বিচারমন্ত্রী শাবানা মাহমুদকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আইনজীবী আহমেদ ইয়াকুব। টিকটকে ইয়াকুবের অনুসারীর সংখ্যা অনেক। তবে শাবানা মাহমুদের জয়ের পার্থক্য ৩২ হাজার থেকে কমে হয়েছে ৩৪২১ ভোট।
একইভাবে জেস ফিলিপস পার্লামেন্টে গাজার যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য লেবার পার্টির সামনের সারি ছাড়তে হয়েছিল। ভোটে নির্বাচিত হলেও এবার তিনি জয়লাভ করেছেন ৬৯৩ ভোটের ব্যবধানে।
ফিলিপিস জয়ের পর যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন অনেকে চিৎকার করেছে। তিনি বলেছেন ‘আমি যত নির্বাচন করেছি তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে খারাপ’। তিনি দাবি করেন, তার প্রচারকর্মীরা বাধা ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
পূর্ব লন্ডনের বেথানল গ্রিন অ্যান্ড স্টেফনি আসনে ছায়ামন্ত্রী রুশনারা আলীর আগে ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুরকে তিনি হারিয়েছেন মাত্র ১৬৯৮ ভোটের ব্যবধানে।
এমনকি নির্বাচনি প্রচারণার সময় লেবার নেতা স্যার কিয়ের স্টারমার নিজেও ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ প্ল্যাকার্ডের মুখোমুখি হয়েছেন এবং তার ভোটের ব্যবধান কমেছে। গাজাপন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থী এন্ড্রু ফেইনস্টেইন পেয়েছেন ৭৩১২ ভোট।
ইসলিংটন নর্থ আসনে সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তিনি লেবার প্রার্থীর চেয়ে সাত হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। এন্টিসেমিটিজম বিষয়ক এক রিপোর্টে প্রতিক্রিয়ার কারণে দলে তার সদস্যপদ স্থগিত হয়েছিল।
রোচডেইলে লেবার পার্টির পল ওয়াহর কাছে হেরেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা গ্যালাওয়ে। কয়েক মাস আগেই এক উপনির্বাচনে তিনি জিতেছিলেন।
গাজা দ্বন্দ্বের বিষয়ে অবস্থানের জন্য লেবার পার্টির ওপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। ইসরাইলে গত সাতই অক্টোবরে হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইল গাজায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
ফেব্রুয়ারিতে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছিল লেবার; কিন্তু সমালোচকদের মতে পার্টির এই অবস্থানে পৌঁছার গতি ছিল খুবই ধীর। নির্বাচনি ইশতেহারে লেবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। গত বছর স্যার কিয়েরের বক্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ইসরাইলের গাজায় পানি ও জ্বালানি বিচ্ছিন্ন করার ‘অধিকার’ আছে।
পরে তিনি এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন দেশটির আত্মরক্ষার অধিকার আছে।