প্রধান দুই প্রার্থীকে নিয়ে কেন চিন্তায় মার্কিন ভোটাররা?
বিবিসি
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম
বৃহস্পতিবারের নির্বাচনি বিতর্কে পিছিয়ে পড়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটারদের মধ্যেই তার বয়স নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরও একটি মেয়াদে দেশ পরিচালনার জন্য বাইডেন মানসিকভাবে উপযুক্ত কী না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।
অন্যদিকে অনেক মার্কিন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও তারা পুরোপুরি উপযুক্ত মনে করেন না। নির্বাচনি বিতর্কে বিপর্যয়ের ঘটনার পর মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজের করা নতুন এক জরিপের ফলাফলে এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
রোববার প্রকাশিত ওই ফলাফলে বলা হচ্ছে, নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশই মনে করেন যে, আরও একটি মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করার মতো মানসিক সুস্থতা বাইডেনের নেই।
এর আগের একটি জরিপে ৬৫ শতাংশ ভোটার একই কথা বলেছিলেন। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনি বিতর্কের পর সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে সিবিএস নিউজের জরিপে বলা হচ্ছে।
অন্যদিকে, নির্বাচনের আরেক প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও প্রায় কাছাকাছি ধরনের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
জরিপে প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোটার বলছেন যে, প্রার্থী হিসেবে তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও মানসিকভাবে উপযুক্ত মনে করেন না।
তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য যে বিষয়টি কিছুটা বেশি উদ্বেগের। কারণ জরিপে অংশগ্রহণকারী তার নিজ দলের সমর্থকদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোটার মনে করেন যে, বাইডেনে উচিৎ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে দলের অন্য কাউকে সুযোগ করে দেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দু’জন প্রার্থীই বেশ বয়স্ক। জো বাইডেনের বয়স এখন ৮১ বছর, আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৭৮ বছর।
কাজেই তাদের বয়স নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ বেশ আগে থেকেও লক্ষ্য করা যাচ্ছিলো। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা বিষয়টিকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
ওই দিন নির্বাচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক টেলিভিশন বিতর্কে বাইডেন প্রায়ই কথার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন এবং তাকে খুব একটা আত্মবিশ্বাসীও দেখাচ্ছিলো না।
মূলতঃ এই ঘটনার পরেই তার দলের সমর্থকদের মধ্যেই অনেকে বাইডেনের বয়স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
তবে বাইডেনের এই দুঃসময়ে পাশে রয়েছেন তার পরিবার ও মিত্ররা। নির্বাচনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাইডেনকে তারা উৎসাহও দিচ্ছেন।
তারপরও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের সবাই এখনও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের একজন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জেমি রাস্কিন রোববার মার্কিন গণমাধ্যম এমএসএনবিসি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে দলের বর্তমান অবস্থাকে ‘কঠিন পরিস্থিতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন যে, এটি (বাইডেনের ইস্যু) নিয়ে আমাদের দলের প্রতিটি স্তরে বেশ সততা ও গুরুত্বের সঙ্গে জোরালো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তবে শেষপর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কী না, সে সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজেই নিবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবারের বিতর্কের পর মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, ওই বিতর্কটিতে বাইডেন তার সেরাটা দিতে পারেননি।
কিন্তু তাই বলে বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা থেকে সরে যেতে হবে বলে মনে করেন না তারা।
বাইডেন-ট্রাম্প বিতর্কে যেসব বিষয় সামনে এসেছে
সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিসও রোববার এমএসএনবিসি-কে বলেছেন যে, নির্বাচনি বিতর্কটি অবশ্যই একটি ধাক্কা ছিল। তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে, বাইডেন আবারও ঘুরে দাঁড়াবেন।
তবে সিবিএস নিউজের নির্বাচনি জরিপের ফলাফলের সঙ্গে অবশ্য বাইডেনের সমর্থকদের অনেকেই একমত নন।
গত শনিবার বাইডেনের নির্বাচনি প্রচারাভিযানের চেয়ারওম্যান জেন ও’ম্যালি দাবি করেছেন যে, সিবিএসের জরিপে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বরং অল্পকিছু সমর্থকদের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে।