Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলের টার্গেট এবার লেবানন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১১:১১ পিএম

ইসরাইলের টার্গেট এবার লেবানন

গাজার রাজনৈতিক সশস্ত্র বাহিনী হামাসের সঙ্গে তীব্র লড়াই শেষের পথে। এবার লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তৎপর ইসরাইলের সেনারা। তাদের মোকাবেলায় দেশটির উত্তর সীমান্তে আরও সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে, এমনটাই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। 

রোববার ইসরাইলের চ্যানেল ১৪ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের কিছু বাহিনী উত্তরে স্থানান্তর করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমরা তা করব।’ তার এই মন্তব্যে এটাই স্পষ্ট হামাস নয়, বরং ইসরাইলের টার্গেট এবার লেবানন। এরই মধ্যে আরও এক যুদ্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে বিশ্ববাসীর মনে। সোমবার ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনে উঠে আসে এ তথ্য। 

৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ইসরাইল-হিজবুল্লাহর মধ্যকার উত্তেজনা। গত সপ্তাহে এই কোন্দল আরও চরম আকার ধারণ করে। কেননা উভয়পক্ষই একে অপরকে হুমকি দিয়ে আসছিল। 

সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, সীমান্তে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর সঙ্গে গুলি বিনিময় বৃদ্ধি পাওয়ায় কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। 

গাজায় যুদ্ধের সময় লেবাননের সীমান্তবর্তী ইসরাইলি শহরগুলো খালি করা হয়েছিল। ওইসব এলাকায় নিজেদের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনার কথা বলেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা আমাদের প্রথম ও সর্বাধিক অগ্রাধিকার। দ্বিতীয়ত আমরা আমাদের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনতে চাই। কূটনৈতিকভাবে না হলে অন্যভাবে আমরা তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনব। তবে আসন্ন এ যুদ্ধের শঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্যে ঘাঁটিগুলোতে থাকা মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত বাইডেন প্রশাসন। এপ্রিল মাসে ইরানের ড্রোন হামলা মোকাবিলায় যে ধরনের সহযোগিতা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে হয়তো তেমন সহযোগিতা করতে পারবে না মার্কিন সেনাবাহিনী। 

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ প্রধান চার্লস কিউ. ব্রাউন এক সাক্ষাৎকারে এই সতর্কতার কথা তুলে ধরেছেন। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট এ খবর জানিয়েছে। মার্কিন বিমানবাহিনীর জেনারেল ব্রাউন বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হলে হিজবুল্লাহকে সহযোগিতায় আরও এগিয়ে আসবে ইরান। গাজার ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকেও সমর্থন করে ইরান। কিন্তু জেনারেল ব্রাউন বলছেন, হিজবুল্লাহর পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে তেহরান। বিশেষ করে তারা যদি মনে করে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী বড় ধরনের হুমকির মুখে রয়েছে। মার্কিন সেনাপ্রধান বলেছেন, লেবাননে ইসরাইলের সামরিক অভিযানের ফলে বৃহত্তর যুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি বাড়বে। এর ফলে মার্কিন সেনারা বিপজ্জনক অবস্থায় পড়বে। জেনারেল ব্রাউন বলেছেন, মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার। 

ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্যপ্রাচ্যে কোনো মার্কিন ঘাঁটি হামলার শিকার হয়নি। তবে দুপক্ষই অনড় অবস্থানে থাকায় যেকোনো মুহূর্তে এই যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যরে জোগান বাড়াতে গাজার রাফাহ থেকে সেনা ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সরিয়ে লেবানন সীমান্তের কাছে নিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। একই সঙ্গে আরও অস্ত্র পেতে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছুটে গেছেন প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। কারণ, হামাসের চেয়েও হিজবুল্লাহর আরও পেশাদার সেনাবাহিনী ও উন্নত অস্ত্র রয়েছে। 

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট রোববার মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে ওয়াশিংটনে পৌঁছান। এই সফরে গাজা যুদ্ধ ও লেবাননের সঙ্গে সংঘাত পরিস্থিতি ও হামাসের হাতে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন, সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলবেন গ্যালান্ট।  শনিবার রাতে ইসরাইল ত্যাগ করার আগে গ্যালান্ট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান মিত্র। আমাদের সম্পর্ক এই সময়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘আমার কাজ হলো আমাদের বীর যোদ্ধারা যাতে তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র পান তা নিশ্চিত করার জন্য সবকিছু করা।’

এরইমধ্যে গাজার সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে ‘আংশিক’ যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত থাকার আভাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যাতে সবাইকে না হলেও অন্তত কয়েকজন ইসরাইলি জিম্মিকে গাজা থেকে দেশে ফিরেয়ে আনা যায়। তবে গাজায় যুদ্ধ অবসানের পথ সুগম করবেএমন কোনো চুক্তিতে যেতে তিনি এখনো রাজি নন। একই সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং গাজায় হামাসের রাজত্ব নির্মূল করা।’ আট মাসের বেশি সময় ধরে গাজা যুদ্ধ চলছে। গাজা থেকে জিম্মিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে হাজার হাজার ইসরাইলি গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভকারীদের মূল দাবি যেকোনো মূল্যে জিম্মিদের দ্রুত ফেরত আনা এবং দেশটিতে আগাম নির্বাচন। 

সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজার সর্বদক্ষিণের নগরী রাফায় তাদের সেনা অভিযান শেষের দিকে। হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইও শেষের দিকে। তবে এর অর্থ এই নয় যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পথে।’

হামাসকে নির্মূল করার পর গাজা পরিচালনার জন্য একটি বেসামরিক প্রশাসন গঠন করতে চায় ইসরাইল। নেতানিয়াহু বলেন, ‘যদি সম্ভব হয়, তবে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের নিয়ে ওই প্রশাসন গঠন করা হবে। সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহ করতে ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সহায়তা নেওয়া হতে পারে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম