ভাগনার বিদ্রোহের এক বছর পর পুতিনের ক্ষমতা নিয়ে যা বলছেন বিশ্লেষকরা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ০৭:১৮ পিএম
ভাগনার বিদ্রোহের পর পুতিন নতুন আইন চালু করেন। কোনো আধা-সামরিক বাহিনীকে ভাগনারের মতো স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ আর কখনই দেওয়া হবে না বলে জানান এই রুশ নেতা। কারন এ বিদ্রোহ তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এক বছরের মধ্যে পুতিন তা কাটিয়ে উঠেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভাগনার বিদ্রোহের এক বছরে পুতিনের ক্ষমতা আরও বেড়েছে। ক্রেমলিনের নেতা এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সুরক্ষিত।
আগামী ২৩ জুন ভাগনার বিদ্রোহের এক বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষে বার্তা সংস্থা এএফপি শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
চাথাম হাউস নামের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণী সংস্থার ফেলো নিকোলাই পেত্রভ বলেন, প্রিগোশিনের উত্থানের আগে আমাদের হাতে এমন কোনো নজির ছিল না যেখানে একটি শক্তিশালী সামরিক ইউনিটের কমান্ডারের একইসঙ্গে আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং গণমাধ্যমে ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রয়েছে।
পুতিন প্রিগোশিনকে এই তিন ধরনের সুবিধাই দেন। এর পেছনে শুধু দুইজনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বই নয়, বরং ইউক্রেনে রাশিয়ার স্থলবাহিনীকে যাতে ভাগনারের সেনারা সহায়তা দিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যও ছিল।
পেত্রভ জানান, প্রিগোশিনকে ক্ষমতাবান করে তোলার বিষয়টিকে বড় ভুল হিসেবে দেখেন পুতিন। সে কারণে তিনি এখন কাউকে এ ধরনের কোনো পদে বসানোর আগে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও আনুগত্যের দিকে নজর দেন। এখন সবাই পুতিনের প্রতি অনুগত এবং তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের ওপর সার্বক্ষণিক ও সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার দিকে জোর দেন।
সম্প্রতি পুতিন রুশ সামরিক বাহিনীতে বড় আকারে রদবদল করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে তার পদ থেকে সরানো হয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া তিনি টেকনোক্র্যাট অর্থনীতিবিদ আন্দ্রেই বেলুসভকে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। যাতে সামরিক বাহিনীর ‘কোনো প্রভাবশালী’নেতা সেনাবাহিনীর স্বার্থকে অন্য যেকোনো বিষয়ের ঊর্ধ্বে রাখতে না পারেন। এমনটাই বলেছেন পেত্রভ।
ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গৌল্ড-ডেভিস বলেন, পুতিন প্রমাণ করেছেন, তিনি চাইলেই এখন সেনাবাহিনীতে যেকোনো ধরনের রদবদল করতে পারেন, যা তার দুর্বলতা নয়, বরং শক্তিমত্তার প্রমাণ।
সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও তিনি তার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। ৮৭ শতাংশ ভোটে জয়ী হন তিনি।
পেত্রভ এএফপিকে বলেন, পুতিনের জনপ্রিয়তা যুদ্ধের আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি—সেটা তিনি এই ভোটের মাধ্যমে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।
গত বছর ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের নেতৃত্বে ভাগনারের সেনারা মস্কোর দিকে বিপুল বিক্রমে এগিয়ে এলে পশ্চিমা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়- ‘থরথর’ করে কাঁপছেন পুতিন।
বিদ্রোহের সময় ভাগনারের সেনারা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ-অন-ডনে অবস্থিত রুশ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের দখল নেয়। তারা অন্তত একটি সামরিক উড়োজাহাজ গুলি করে ভূপাতিত করে এবং রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এ বিদ্রোহের অবসান ঘটে। বেলারুশের মধ্যস্থতায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্রোহ থামিয়ে দেওয়া হয়।
প্রিগোশিনের এ উদ্যোগকে এর আগের ২৫ বছরের মধ্যে পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল। ভাগনার বিদ্রোহের দুই মাস পর রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন তাদের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন।