বিদেশি সাংবাদিক নিয়ে অমিত শাহের সিদ্ধান্তে অস্বস্তিতে জয়শঙ্কর
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
চার মাসের মধ্যে দু’জন বিদেশি সাংবাদিককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করল ভারত সরকার। তাদের কাজ করার আইনি অনুমতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এনিয়ে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছে এস জয়শঙ্করের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার ফরাসি সাংবাদিক সেবাস্তিয়াঁ ফারসি সামাজিকমাধ্যমে জানান, ১৩ বছর ভারতে কাজ করার পরে তাকে আর কাজ করার আইনি অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ভারত ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।
বিভিন্ন ইউরোপীয় রেডিও চ্যানেলের দক্ষিণ এশিয়ার সাংবাদিক সেবাস্তিয়াঁ এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘তিন মাস আগে, ৭ মার্চ, ভারত সরকার আমার এ দেশে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নবায়ন করতে অস্বীকার করে। ফলে আমার সাংবাদিকতা এবং উপার্জনের পথটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বারবার জানতে চাওয়া হলেও তারা এই সিদ্ধান্তের কোনো কারণ জানায়নি। আমি অনেকবার আবেদনও জানিয়েছি, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।’
এর আগে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে, আরেক ফরাসি সাংবাদিক ভানেসা দুনকের ভারতে কাজ করার আইনি অনুমতিও প্রত্যাহার করা হয়েছিল। ২৫ বছর আগে পড়ুয়া হিসেবে ভারতে এসেছিলেন ভানেসা। সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন ২০ বছরেরও বেশি। তিনিই ছিলেন ভারতে সবচেয়ে বেশি দিন কর্মরত কোনো বিদেশি সাংবাদিক। ১৬ ফেব্রুয়ারি ভারত ছাড়েন তিনি।
এপ্রিলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক অবনী ডায়াসেরও ভারতে কাজ করার আইনি অনুমতি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এটেছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কোন বিদেশি নাগরিককে ভিসা বা কাজের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, কত দিনের জন্য দেওয়া হবে এবং ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না—তা নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সরকারের বক্তব্য, বিষয়টি সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত, ফলে কোনো বিদেশি নাগরিককে তারা কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয়। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের যে কোনো দেশই ভিসা বা কাজের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকের কাছে কোনোভাবেই দায়বদ্ধ নয়।
তবে অমিত শাহের এই সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছে এস জয়শঙ্করের মন্ত্রণালয়। আপাতভাবে এই সিদ্ধান্তের দায় জয়শঙ্করের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপরে চাপাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, ভারত ফ্রান্সের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক সাফল্যের সঙ্গে বহাল রেখেছে শুধু তাই-ই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই দেশটি নিঃশর্তভাবে বেশির ভাগ বিতর্কিত ভারতীয় আন্তর্জাতিক অবস্থানে মোদি সরকারকে সমর্থন করে এসেছে। দু’দেশের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত মেলবন্ধন ফ্রান্সের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও বটে। ফলে সরকারিভাবে মুখ না খুললেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফরাসি সাংবাদিকদের ভারতে কাজ করার অনুমতি না দেওয়া প্যাঁচে পড়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিরোধীদের বক্তব্য, অমিত শাহ এখনও মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না যে, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হারিয়েছে। ফলে নিজস্ব হিসেবে এই ধরনের বিতর্কিত ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন।
আনন্দবাজার