রাইসির মৃত্যুতে ইরানে অভ্যুত্থান কামনা করেছিল ‘দ্য হিল’!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪, ০৯:৫২ পিএম
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহতের পর ইরানে সামরিক অভ্যুত্থান কামনা করেছিল মার্কিন ম্যাগাজিন ‘দ্য হিল’।
সম্প্রতি হিল-এর ওয়েবসাইটে শাহারজাদ আহমাদির লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে তিনি দুর্ঘটনার শিকার ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ঘটনায় দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সংকটজনক হিসেবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেন।
‘ইরানের নতুন নির্বাচন আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থানের জন্ম দিতে পারে’-এমন শিরোনামে নিবন্ধটি ওই সাইটে প্রকাশিত হয়।
লেখক শাহারজাদ আহমাদি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট থমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক এবং ইরান ও ইরাক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তিনি ইরানি বংশোদ্ভূত এবং ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের হয়ে কাজ করেন।
ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার ওই নিবন্ধটি অদ্ভুত অনুমানের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে এবং মনগড়া বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ’।
নিবন্ধের অন্য জায়গায় দাবি করা হয়েছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজনৈতিক অঙ্গনে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটেছে। কারণ এখন এ সরকার ব্যবস্থার সমর্থক প্রার্থীরা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, দ্য হিলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধের লেখক সম্ভবত এটা ভুলে গেছেন, যে কোনো দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এমন সব লোক নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন, যারা সেই দেশের রাজনৈতিক কাঠামো বা নীতি আদর্শকে মেনে নিয়েছেন এবং সেই দেশের সংবিধানের অধীনে তারা রাজনীতি করছেন বা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই উত্তেজনাপূর্ণ হয় এবং রক্তাক্ত সহিংস ঘটনাও ঘটে। যা কোনো দেশের সরকার ব্যবস্থার জন্যই কাম্য নয়।
হিল ম্যাগাজিনের লেখক শাহারজাদ আহমাদি তার নিবন্ধের আরেকটি অংশে, মার্কিন ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের নিহত হওয়ার ঘটনাকে ইরানের ক্ষয়ক্ষতি হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডে তিনি আমেরিকা ও ইসরাইলের জড়িত থাকার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। তাই একটি দেশের বৈধ রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি একজন লেখকের এ ধরনের মনোভাব বা মনগড়া কথাবার্তা থেকে তার বিদ্বেষী চিন্তাভাবনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ইরনার মতে, ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইব্রাহিম রাইসিসহ দেশটির কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি, সিরিয়ায় ইরানের সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমির মতো ব্যক্তিরা যারা শাহাদাত বরন করেছেন, তাদের এ লেখক পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে অভিহিত করেছেন। লেখক আরও দাবি করেছেন যে, শুধুমাত্র একজন সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অবশিষ্ট রয়েছেন, যিনি তার পদ ধরে রেখেছেন। তিনি হচ্ছেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
এছাড়া লেখক একটি শিশুসুলভ ভবিষ্যদ্বাণীতে দাবি করেছেন যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বর্তমান নেতার পর তার পুত্র সাইয়্যেদ মোস্তবা খামেনি ইরানের পরবর্তী শীর্ষ নেতা হবেন। তার এই দাবি একেবারেই অবাস্তব এবং বোঝাই যায় তিনি ইরানের নেতৃত্ব, নির্বাচনি কাঠামো এবং সর্বোচ্চ নেতার পরিবারের রাজনৈতিক মর্যাদা সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেন না।
লেখক তার লেখার শেষ অংশে, সাইয়েদ ইব্রাহিম রাইসির শেষ বিদায় অনুষ্ঠান এবং পাঁচ বছর আগে জেনারেল কাসেম সোলেইমানির শেষ বিদায় অনুষ্ঠানের তুলনা করে দাবি করেছেন যে, প্রেসিডেন্টের শোক অনুষ্ঠানে কম লোক অংশগ্রহণ করেছে। এরপর তিনি দাবি করেছেন, এ থেকে বোঝা যায় ইসলামি প্রজাতন্ত্রী শাসন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আগ্রহ আগের মতো নেই। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, শহিদ প্রেসিডেন্ট রাইসির জানাজা অনুষ্ঠানে নজিরবিহীন মানুষের সমাগম ঘটেছিল, যা কাসেম সোলাইমানিকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল।
যাইহোক, লেখক যা কিছু বলেছেন এসবই তার নিজস্ব চিন্তা বিশ্বাসের ফসল এবং তার ব্যক্তিগত অভিমত। কেননা তিনি হচ্ছেন চরম ইরান বিদ্বেষী একজন মার্কিন লেখক। তাই এ ধরণের পক্ষপাতদুষ্ট লেখকের পক্ষে ইরানের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। তিনি তার লেখার পেছনে কোনো দলিল প্রমাণও উপস্থাপন করেননি এবং মনগড়া কথাবার্তা বলেছেন। আর ‘দ্য হিল’ ম্যাগাজিন এই লেখককে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে মাত্র।
উল্লেখ্য, ইরানে ১৯৫৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থান হয়, যা ২৮ আগস্টের অভ্যুত্থান নামে পরিচিত। এ ঘটনায় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেকের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ইরানের সেনাবাহিনীতে প্রভাব বিস্তার করে পশ্চিমাদের তাবেদার হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভিকে সুরক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানিরা একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। আর এটাই ইরানের শত্রুদের মাথাব্যথার প্রধান কারণ। সূত্র: ইরনা ও তাসনিম।