আরএসএস প্রধান মুখ খোলায় ‘অস্বস্তিতে’ বিজেপি!
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
দশ বছর সরকার পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইচ্ছাই ছিল শেষকথা। সংঘের ইচ্ছা–অনিচ্ছা প্রাধান্য পায়নি। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো মোদির বিজেপিতে এবার সংঘের প্রভাব বাড়বে কিনা, সেটাই এই মুহূর্তের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
‘সরকারকে স্থিতিশীল করতে গেলে মোদিকে সবার সঙ্গেই চলতে হবে। ঐকমত্যের ওপর জোর দিতে হবে।’ এমন মন্তব্যে নরেন্দ্র মোদির সেই কর্তৃত্ববাদী আচরণের প্রতিই ইঙ্গিত করেন আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ) প্রধান মোহন ভাগবত।
সরকার গঠনের পরদিন সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘প্রকৃত সেবকের অহংকারী হওয়া সাজে না। মর্যাদা রক্ষা করে তাকে চলতে হয়। নির্বাচনি প্রচারে সেই মর্যাদা রক্ষিত হয়নি।’
আরএসএস প্রধানের এই মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, বিরোধীদের সুরে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত মুখ খোলায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। প্রকাশ্যে এ নিয়ে মন্তব্য না করলেও পদ্মশিবিরে ঘরোয়াভাবে বলা হচ্ছে, ভাগবত ভুল কিছু বলেননি। তিনি প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কের মতো পথ প্রদর্শন করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করে কংগ্রেস বলছে, যাকে (নরেন্দ্র মোদি) উদ্দেশ করে ওই বার্তা, তিনি কি আদৌ শুনবেন? নিজেকে সংশোধন করবেন?
মোদির মন্ত্রিসভায় অসন্তোষ, যা বলছেন শরিকরা
বিশ্লেষকরা বলছেন, এত দিন বিজেপি শক্তিশালী থাকায় সেভাবে মুখ খোলেননি আরএসএসের নেতারা। এবারের ভোটের পরে স্পষ্ট যে, বিজেপির সেই সংখ্যার জোর আর নেই। তারা শরিক নির্ভর। যে কারণে প্রকাশ্যে মুখ খোলা শুরু করেছেন শীর্ষ সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
বিশেষ করে ভোটের পরেই প্রকাশ্যে নাম না করে মোদি সরকারের সমালোচনা করে সঙ্ঘ কর্মীদের যে ক্ষোভ তা-ও সামনে এনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন সংঘ প্রধান।
যেসব কারণে মোদির বিজেপির সঙ্গে সংঘের দূরত্ব বেড়েছে তা হলো- ভোট চলাকালে বিজেপি সভাপতি জগৎ প্রতাপ (জেপি) নাড্ডার সংঘ সম্পর্কে দেওয়া এক বিবৃতি। এরপর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, এবারের ভোটে সংঘ বিজেপি প্রার্থীদের জেতাতে সেভাবে সক্রিয় হয়নি। নরেন্দ্র মোদির কর্তৃত্ববাদী আচরণ তাদের পছন্দ নয়। যেভাবে সংঘের আদর্শবিরোধীদের তিনি দলে টেনেছেন, নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন, তা তাদের অনুমোদন পায়নি।
বিজেপি সভাপতি জগৎ প্রতাপ (জেপি) নাড্ডা সংঘ সম্পর্কে ওই বিবৃতিতে বলেছিলেন, বিজেপি যত দিন সক্ষম ছিল না, তত দিন তাদের সংঘ সাহচর্য প্রয়োজন ছিল। এখন বিজেপি সক্ষম হয়েছে। নিজের ভালোমন্দ নিজেরাই বুঝতে শিখেছে। নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে শিখেছে। এখন আর প্রতি পদে সংঘের প্রয়োজন নেই।
ভাগবত তার ভাষণে বলেন, যিনি বাস্তবিকই সেবক, যাকে সত্যি সত্যিই সেবক বলা যায়, তিনি সব সময় মর্যাদা রক্ষা করে চলেন। যিনি সেই মর্যাদা পালন করে চলতে পারেন, তিনিই কর্মবীর; কিন্তু তাকে কাজের মোহগ্রস্ত হলে চলবে না। কাজ করার পর যেন তার অহংকার না আসে। যেন না বলেন, আমিই এই কাজ করেছি। অহংকার যাকে গ্রাস করে না, তিনিই প্রকৃত সেবক।