
প্রিন্ট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪১ এএম
মোদিকে ‘অহংকারী’ ইঙ্গিত করে যে বার্তা দিলেন আরএসএস প্রধান

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম

রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ-আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
দশ বছর সরকার পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইচ্ছাই ছিল শেষকথা। সংঘের ইচ্ছা–অনিচ্ছা প্রাধান্য পায়নি। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো মোদির বিজেপিতে এবার সংঘের প্রভাব বাড়বে কিনা, সেটাই এই মুহূর্তের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
‘সরকারকে স্থিতিশীল করতে গেলে মোদিকে সবার সঙ্গেই চলতে হবে। ঐকমত্যের ওপর জোর দিতে হবে।’ এমন মন্তব্যে নরেন্দ্র মোদির সেই কর্তৃত্ববাদী আচরণের প্রতিই ইঙ্গিত করেন আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ) প্রধান মোহন ভাগবত। সরকার গঠনের পরদিন সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘প্রকৃত সেবকের অহংকারী হওয়া সাজে না। মর্যাদা রক্ষা করে তাকে চলতে হয়। নির্বাচনি প্রচারে সেই মর্যাদা রক্ষিত হয়নি।’
নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিনই নাগপুরে সংঘের সদর দফতরে শিক্ষানবিশদের এক অনুষ্ঠানে গত সোমবার মোহন ভাগবত এ মন্তব্য করেন। আরএসএস প্রধানের এই মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
যেসব কারণে মোদির বিজেপির সঙ্গে সংঘের দূরত্ব বেড়েছে তা হলো- ভোট চলাকালে বিজেপি সভাপতি জগৎ প্রতাপ (জেপি) নাড্ডার সংঘ সম্পর্কে দেওয়া এক বিবৃতি। এরপর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, এবারের ভোটে সংঘ বিজেপি প্রার্থীদের জেতাতে সেভাবে সক্রিয় হয়নি। নরেন্দ্র মোদির কর্তৃত্ববাদী আচরণ তাদের পছন্দ নয়। যেভাবে সংঘের আদর্শবিরোধীদের তিনি দলে টেনেছেন, নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন, তা তাদের অনুমোদন পায়নি।
বিজেপি সভাপতি জগৎ প্রতাপ (জেপি) নাড্ডা সংঘ সম্পর্কে ওই বিবৃতিতে বলেছিলেন, বিজেপি যত দিন সক্ষম ছিল না, তত দিন তাদের সংঘ সাহচর্য প্রয়োজন ছিল। এখন বিজেপি সক্ষম হয়েছে। নিজের ভালোমন্দ নিজেরাই বুঝতে শিখেছে। নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে শিখেছে। এখন আর প্রতি পদে সংঘের প্রয়োজন নেই।
ভাগবত তার ভাষণে বলেন, যিনি বাস্তবিকই সেবক, যাকে সত্যি সত্যিই সেবক বলা যায়, তিনি সব সময় মর্যাদা রক্ষা করে চলেন। যিনি সেই মর্যাদা পালন করে চলতে পারেন, তিনিই কর্মবীর; কিন্তু তাকে কাজের মোহগ্রস্ত হলে চলবে না। কাজ করার পর যেন তার অহংকার না আসে। যেন না বলেন, আমিই এই কাজ করেছি। অহংকার যাকে গ্রাস করে না, তিনিই প্রকৃত সেবক।
সংঘপ্রধান আরও বলেন, নির্বাচনকে যুদ্ধ হিসেবে দেখা ঠিক নয়। বরং তা প্রতিযোগিতার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। নির্বাচনের সময় আচরণ সম্পর্কে বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, একে অন্যের প্রতি যেভাবে অভিযোগ হেনেছে, তা অবাক করার মতো। তাদের আচরণ সমাজকে কিভাবে বিভাজিত করছে কেউ তা খেয়াল রাখেনি। তা করতে গিয়ে সংঘকে অযথা টেনে আনা হয়েছে, বিনা দোষে।
রাজনীতিতে বিরোধী পক্ষের প্রয়োজন ও অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি বিরোধী পক্ষ বলি না। বলি প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষ বিরোধী হয় না। গণতন্ত্রে এটাই নিয়ম। দুই পক্ষে প্রতিযোগিতা হবে শালীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করে। এবার সেটা হয়নি। অথচ মতৈক্য জরুরি। যদিও শতভাগ মতৈক্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
মোহন ভাগবতের এসব মন্তব্য এটা পরিষ্কার যে, বিজেপির রাজনৈতিক নেতৃত্বের আচার–আচরণে সংঘ বিরক্ত। আগামী বছর আরএসএস শতবর্ষে পা দেবে। সরকারকে ঠিকপথে পরিচালনার জন্য সংঘ কতটা সক্রিয় হচ্ছে, আগামী দিনের বিভিন্ন সরকারি সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তা বোঝা যাবে।