আফিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করে যা জানালেন বোন ফৌজিয়া
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৪, ০৬:২১ পিএম
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দি পাকিস্তানের বহুল আলোচিত স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করেছেন তার বোন ড. ফৌজিয়া সিদ্দিকী। রোববার আফিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে করাচিতে ফিরে আসেন তিনি।
করাচি বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ফৌজিয়া সিদ্দিকী বলেন, আফিয়া গতবারের চেয়ে বেশি দুর্বল ছিল। আফিয়া জানিয়েছে, তার মাথায় বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সাক্ষাতে আমরা তিন ঘণ্টা ধরে চিৎকার-চেঁচামেচি করে কথা বলতে হয়েছে, মাঝে কাচের দেয়াল ছিল। খবর জিও নিউজ উর্দূর।
ড. ফৌজিয়া সিদ্দিকী বলেন, গতবার সাক্ষাতের সময় চাবি হারিয়ে যাওয়ায় কথা বলেছিল। এবার ফোন কাজ করছিল না। আফিয়াকে নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে সেখানেই রেখে যাওয়া হয়।
ফৌজিয়া সিদ্দিকী আরও বলেন, আমাদের আইনজীবী আফগানিস্তানে গিয়ে অনুসন্ধান করেছেন। যে পরিবার আফিয়াকে রেখেছিল তাদেরও পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের আগের ও বর্তমান সরকার সম্পূর্ণভাবে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত, সরকারের কাছে আমার অনুরোধ আফিয়াকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।
এর আগে গত বছরের শুরুতে ২০ বছর পর টেক্সাসের একটি কারা হাসপাতালে বোনকে দেখতে যান ফৌজিয়া। পাকিস্তানে ফেরার পর সেসময় এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেন। ফৌজিয়া জানান, ড. আফিয়াকে তিনি প্রথমে চিনতে পারেননি।
ড. আফিয়াকে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের একটি ফেডারেল জেলা আদালত হত্যাচেষ্টা ও হামলার অভিযোগে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তিনিই প্রথম নারী যুক্তরাষ্ট্র যার বিরুদ্ধে আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ করেছে কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হননি।
১৮ বছর বয়সে ডা. আফিয়া বোস্টনের ম্যাচাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে তার ভাই থাকতেন। পরে ব্রান্ডিস ইউনিভার্সিটি থেকে স্নায়ুবিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জন করেন তিনি। কিন্তু ২০০১ সালে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর ইসলামিক সংগঠনগুলোকে অনুদান দেওয়ার অভিযোগে তিনি এফবিআইয়ের নজরদারিতে আসেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ডা. আফিয়া আল-কায়েদায় যোগ দিয়েছিলেন এবং পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার মূল হোতাদের একজন খালিদ শেখ মোহাম্মদের পরিবারে বিয়ে করেন। ২০০৩ সালে করাচিতে তিন সন্তানসহ নিখোঁজ হন ডা. আফিয়া। পাঁচ বছর পর আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশে স্থানীয় বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে।
এদিকে, সে সময় তার এই দণ্ডাদেশ পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। আফিয়া পাক-মার্কিন গোপন চক্রান্তের শিকার বলে তার সমর্থকরা দাবি করে আসছিলেন।
তার দণ্ডাদেশের পর আল কায়েদার তৎকালীন উপপ্রধান এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুসলিমদের প্রতি ‘বদলা’ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
আফিয়ার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পাক-মার্কিন সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল।
এমনকি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও তার নির্বাচনী প্রচারণায় আফিয়ার মুক্তির দাবি করেছিলেন।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারও ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তি নিশ্চিত করতে সব ধরণের চেষ্টা করবে বলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীরা জানিয়েছেন।