Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

চীন সফরে উচ্ছ্বসিত পুতিন, শির মন্তব্য ভাসা ভাসা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম

চীন সফরে উচ্ছ্বসিত পুতিন, শির মন্তব্য ভাসা ভাসা

চলতি সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অতিথি ভ্লাদিমির পুতিনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। বাদক দল বাজিয়েছে পুরোনো রেড আর্মির গান। তিয়েনআনমেন স্কয়ার দিয়ে যখন দুই নেতা যাচ্ছিলেন, তখন শিশুরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল। একে অপরকে জড়িয়ে ক্যামেরার সামনে ছবিও তুলেছেন শি ও পুতিন।

দুই নেতার পরস্পরের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়টি বেশ ফলাও করে প্রচার করেছে রাশিয়া ও চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। 

চীনের দিক থেকে পুতিনকে জানানো এ অভ্যর্থনা ও দুই নেতার মধ্যে ঐক্যের সম্পর্ক দেখানোর চেষ্টা ছিল বেইজিংয়ের নিজের স্বার্থে। সেখানে ছিল না রাষ্ট্রীয় অতিথি পুতিন বা তার দেশকে নিয়ে স্তুতিবাক্যের কোনো জোয়ার।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, তিনি ও প্রেসিডেন্ট শি ‘এতটা ঘনিষ্ঠ, যেন ভাই-ভাই’। চীনের অর্থনীতির প্রশংসা করে পুতিন বলেন, ‘এটি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।’ তার এ প্রশংসা দেশের অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে চিন্তায় থাকা বেইজিংয়ের কর্মকর্তাদের সম্ভবত সান্ত্বনার কাজ দেবে।

পুতিনের এমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসার প্রতিধ্বনি ছিল না শি’র কণ্ঠে। তার মন্তব্য ছিল ভাসা-ভাসা। তিনি বলেন, পুতিন একজন ‘ভালো বন্ধু ও সুপ্রতিবেশী’।

ভ্লাদিমির পুতিনের এ সফর ছিল একধরনের শক্তির প্রদর্শন। এ সফর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের জন্য ছিল বিশ্বকে এটি দেখানোরও এক সুযোগ যে তার পক্ষে শক্তিশালী একটি মিত্র রয়েছে।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়ার পর রুশ নেতাকে একজন সমাজচ্যুত ব্যক্তির মতোই ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। 

কিন্তু চীনা নেতার ক্ষেত্রে উল্টোটা। তাকে দেখা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বহীন নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ একজন অংশীদার হিসেবে।

পুতিন চীন সফরে বিনয়ের সঙ্গে কিছু আদায় করতে গেছেন। তার আগ্রহ ছিল, পশ্চিমা কড়া নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা ও একঘরে হয়ে পড়া রাশিয়ার সঙ্গে চীন যেন ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যায়। সফরে তার কণ্ঠ ছিল মধুমাখা। চীনকে নিয়ে মুখে ছিল প্রশংসার ফুলঝুরি।

পুতিন বলেন, তার পরিবার মান্দারিন ভাষা (চীনা ভাষা) শিখছে। এটি বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো বিষয়। কেননা নিজ সন্তানদের বিষয়ে প্রকাশ্যে তার কথা বলা একেবারে বিরল ঘটনা।

ইউক্রেনে চলা ব্যয়বহুল যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। এটি চীন-রাশিয়া সম্পর্কেও বদল এনেছে। যুদ্ধে ফুটে উঠেছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও এর অর্থনীতির দুর্বলতা। প্রেসিডেন্ট শি জানেন, বিশ্বে এখন নেতৃত্ব দেওয়ার সময় তার।

ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়াকে করেছে একঘরেও। পশ্চিমাদের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু বেইজিং রাশিয়ার মতো বিশ্ব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেনি, তা চায়ও না।

জনসমক্ষে প্রেসিডেন্ট শি’র বক্তব্যে প্রবল আগ্রহ বা উদ্দীপনার ঘাটতি থাকতে পারে। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, চীন দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়।

সফরে পুতিনকে ঝংনানহাইয়ে নিজ সরকারি বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান শি। এই বাসভবনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে গিয়ে সম্মানিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন কম বিশ্বনেতাই। তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ২০১৪ সালে চীন-মার্কিন সম্পর্কের সবচেয়ে সুখের সময় চীন সফরে ওই বাসভবনে যান ওবামা।

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শি’র মধ্যে স্পষ্ট। একদিকে তিনি পুতিনের সঙ্গে জোট টিকিয়ে রাখতে চান, অন্যদিকে একঘরে রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলে তা পশ্চিমা দেশের সঙ্গে তার দেশের স্থিতিশীল সম্পর্কে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে- সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে চান। চীনের মন্থর অর্থনীতি চাঙা করতে পশ্চিমা দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখা জরুরি, সেটা জানেন তিনি।

প্রকৃতপক্ষে পুতিনের চীন সফর ছিল পুরোটাই অর্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তিনি চাইছিলেন রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের সহায়তা।

রুশ নেতার সঙ্গে যাওয়া ব্যক্তিবর্গকে দেখে বেইজিং সফরে তার প্রত্যাশা সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। পুতিনের সঙ্গে ছিল রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, তার অর্থমন্ত্রী ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।

স্বাভাবিকভাবে পুতিনের এ সফরে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে চীন-রাশিয়া বাণিজ্য সম্পর্কের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে। বিবৃতিতে ১৩০ বার উল্লেখ করা হয়েছে ‘সহযোগিতা’ শব্দ।

অবশ্য এ সবকিছুর ওপরই সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে উসকানি দেওয়া এবং দেশটির ড্রোন ও ট্যাংকে ব্যবহারের উপযোগী যন্ত্রাংশের সরবরাহ করা বিষয়ে চীনকে সতর্ক করে দেন।

পুতিনের বেইজিং সফর, তাকে জানানো অভ্যর্থনা ও সফর ঘিরে অন্যান্য আয়োজন নিশ্চিত করেই এ ইঙ্গিত দেয় যে শি পশ্চিমা চাপের কাছে ভেসে যাবেন না, সেটি প্রমাণ করতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে এমন ঐক্য প্রদর্শনের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে মস্কোর ব্যাপারে শি কত দূর যেতে প্রস্তুত, তা নিয়ে সীমাবদ্ধতার বিষয়টি।

সর্বোপরি চীনের স্বার্থ রাশিয়ার স্বার্থ নয়। দুই দেশের সম্পর্কের অংশীদারত্বে সি সম্ভবত ততক্ষণই সহযোগিতা করবেন, যতক্ষণ তা তার স্বার্থের সঙ্গে মানানসই হবে। এমনকি তাকে ‘প্রিয় বন্ধু’ ও মিত্র পুতিনের যতই প্রয়োজন হোক।

সূত্র: বিবিসি
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম