দুই বছর পেরিয়ে গেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বদিকের অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে রাশিয়া। হামলা চালিয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহরগুলোতেও।
এবার ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে স্থল অভিযান শুরুর মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। সাঁজোয়া যান নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) আকস্মিক এই অভিযান শুরু করে দেশটি। শনিবার এপির খবরে বলা হয়েছে, এর আগেও রুশ সেনারা ইউক্রেনের এ শহরটিতে অভিযান চালিয়েছিল।
শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, তারা একটি আশ্চর্য স্থলআক্রমণ শুরু করার পরে ইউক্রেনের পূর্বের ছয়টি গ্রাম দখল করেছে। রাশিয়া বলেছে, তাদের সেনারা খারকিভ অঞ্চলের পাঁচটি গ্রাম- বোরিসিভকা, ওগিরসেভ, প্লেটেনিভকা, পাইলনা এবং স্ট্রিলেচা মুক্ত করেছে। দোনেৎস্ক অঞ্চলের কেরামিক গ্রামটিও এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এর আগে, শুক্রবার ইউক্রেনের একটি ঊর্ধ্বতন সামরিক সূত্র বলেছে, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের এক কিলোমিটার (০.৬ মাইল) অগ্রসর হয়েছে এবং রাশিয়ার ভ‚খণ্ডে হামলা প্রতিরোধে খারকিভ এবং প্রতিবেশী সুমি অঞ্চলে একটি বাফার জোন তৈরি করার চেষ্টা করছে। এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়া।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা খারকিভে রুশ বাহিনীকে মোকাবিলা করার জন্য অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়েছে। আরও জানিয়েছে, রুশ বাহিনী খারকিভের সীমান্তবর্তী শহর ভবচানস্কে ব্যাপক গোলা ও বোমা হামলা চালাচ্ছে। এই আক্রমণের বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খারকিভের দিকে রাশিয়া নতুন হামলা শুরু করেছে। সেখানে এখন তুমুল লড়াই চলছে। খারকিভ ঘিরে রাশিয়ার সেনা জড়ো করা ও সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করে আসছিল ইউক্রেন। রুশ সেনারা ইউক্রেনের অস্ত্রের ঘাটতি কাজে লাগাতে চাইছে বলেও জানিয়েছিলো দেশটি।
জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়া হয়তো বসন্ত অথবা গ্রীষ্মে একটি বড় অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শুক্রবারের হামলা মোকাবিলায় ইউক্রেনের সেনারা প্রস্তুত ছিল। কিন্তু রাশিয়া অতিরিক্ত সেনা নিয়ে হামলা করেছে।’
ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ভোর ৫টা নাগাদ শত্রুরা সাঁজোয়া যানের আড়ালে আমাদের প্রতিরক্ষা রেখা ভেদ করার চেষ্টা করেছে তারা (রুশ সেনারা)। এখন পর্যন্ত এসব হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। তবে লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়ছে। খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর ওলেগ সিনেগুবভও লড়াই অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, শনিবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০টি বসতিতে আর্টিলারি ও মর্টার হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। আক্রমণ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে ওয়াশিংটন কিয়েভের জন্য একটি নতুন ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বলেছে, এটি নিশ্চিত যে ইউক্রেন যে কোনো নতুন রুশ অভিযান প্রতিহত করতে পারবে।
ইউক্রেনের স্থলবাহিনীর কমান্ডার ওলেকসান্দর পাভলিউক বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের ২৬ মাস ধরে চলা লড়াই আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি কঠিন ধাপে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। শুক্রবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এসব বলেছেন তিনি। ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অস্ত্র সরবরাহে দেরি হওয়াকে রাশিয়া যখন সুযোগ হিসাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে, তখনই এমন মন্তব্য করলেন পাভলিউক।
দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাভলিউক আরও বলেছেন, রাশিয়া জানে যে আমরা এক বা দুই মাসের মধ্যে যদি যথেষ্ট অস্ত্র পেয়ে যাই, তবে পরিস্থিতি তাদের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্র“য়ারিতে ইউক্রেনে হামলার পর খারকিভ দখল করেছিল রুশ সেনারা। কিন্তু ওই বছর ইউক্রেনের পালটা আক্রমণে শহরটি থেকে পিছু হটে মস্কো। গত বছর ইউক্রেনের পালটা আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ার পর রুশ সেনারা ধীরে ধীরে ফের আক্রমণে যাচ্ছে। পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে তারা। মার্চ মাসে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে বাফার জোন প্রতিষ্ঠায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আহ্বানের পর খারকিভ নিয়ে কিয়েভের উদ্বেগ শুরু হয়।
পুতিনের দাবি, গোলাবর্ষণ ও সীমান্তে অনুপ্রবেশ থেকে রাশিয়াকে রক্ষায় এই বাফার জোন প্রয়োজন। পুতিনের এমন আহ্বানের পর থেকেই খারকিভে বিমান হামলায় অঞ্চলটির বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও রাশিয়া এখনো পূর্ণ শক্তি ধরে রেখেছে। বিপরীতে জনশক্তি, গোলা ও আকাশ প্রতিরক্ষার মজুতের ঘাটতির মুখে পড়েছে ইউক্রেন।